দেওয়ানবাগীকে ঢাকায় ওরসের অনুমতি দেবে না ডিএসসিসি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) রাজধানীতে `কুতুববাগ দরবার শরীফ’কে বার্ষিক ওরসের অনুমতি না দেওয়ার পর এবার আরামবাগের `দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ’-এর পীর দেওয়ানবাগীকে ঢাকায় ওরসের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। জনসাধারণের দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও বিরক্তির কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থার সংশ্লিষ্ট দফতর সম্পত্তি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

ডিএসসিসি এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফের মিডিয়া মুখপাত্র ড. সায়ীদ মেহেদী হাসান বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যদি আমাদেরকে অনুমতি না দেয় তাহলে আমরা ঢাকায় ওরস করবো না।’ অপরদিকে, কুতুববাগ দরবার শরীফ তার বার্ষিক ওরস ও বিশ্বজাকের ইজতেমা নারায়ণগঞ্জের কুতুববাগ দরবার শরীফে স্থানান্তর করে নিয়েছে।

অন্যান্য বছরের মতো এবছরও রাজধানীর আরামবাগ, ফকিরাপুল, মতিঝিল ও কমলাপুর এলাকাজুড়ে বার্ষিক ওরসের উদ্যোগ নেয় দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ। আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি এই ওরস অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এজন্য নির্ধারিত সময়ের আগে সিটি করপোরেশন থেকে জায়গা ব্যবহারের জন্য অনুমতি চাওয়ার পরিকল্পনা করছে দেওয়ানবাগ দরবার। কিন্তু, তার আগেই এ মনোভাব জানালো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

এদিকে, দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাছে এমন মনোভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, এ ধরনের অনুষ্ঠানের কারণে চলে নানা কর্মযজ্ঞ। এতে সড়কজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বাড়ে জন ভোগান্তি। এজন্য এসব সামাজিক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ঢাকার বাইরে তাদের অনুষ্ঠানগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছে দুই সিটি করপোরেশন। সর্বশেষ গত বছর ফার্মগেটের কুতুববাগ দরবার শরীফকে শর্ত সাপেক্ষে ওরস আয়োজনের অনুমতি দিয়ে এ বছর থেকে তা ঢাকার বাহিরে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সে নির্দেশ উপেক্ষা করে আবারও ওরসের আয়োজন করে। এ কারণে গত ১৭ ডিসেম্বর সে আয়োজন নস্যাৎ করে দেয় উত্তর সিটি করপোরেশন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় পড়া আরামবাগের দেওয়ানবাগ দরবার শরীফও একই ধরনের ওরসের আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এ বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে আর সে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এবছর থেকে এমন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুমতি আর দেবো না। কারণ, এতে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া এ ধরনের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক আগ থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করে। এতে সড়কজুড়ে তীব্র যানজটের পাশাপাশি এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বাড়ে ও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফের মিডিয়া মুখপাত্র ড. সায়ীদ মেহেদী হাসান বলেন, ‘মানুষকে হেদায়েতই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। সিটি করপোরেশন যদি আমাদেরকে অনুমতি না দেয় তাহলে আমরা ঢাকায় ওরস করবো না। আর অনুমতি দেওয়া হলে যেসব শর্ত দেওয়া হবে সেগুলো মেনেই ওরস করা হবে।’

জানা গেছে, দেওয়ানবাগের পীরের নাম মাহবুব-এ খোদা। তিনি ‘দেওয়ানবাগী’ নামে পরিচিত। ১৯৪৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ আবদুর রশিদ সরদার। মা সৈয়দা জোবেদা খাতুন। ছয় ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। নিজ এলাকার তালশহর কারিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

ফরিদপুরে চন্দ্রপাড়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা আবুল ফজল সুলতান আহমেদ চন্দ্রপুরীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন দেওয়ানবাগী পীর। এরপর তার মেয়ে হামিদা বেগমকে বিয়ে করেন দেওয়ানবাগী (মাহবুব-এ খোদা)। এর সুবাদে শ্বশুরের কাছ থেকে খিলাফত লাভের দাবি করেন। তার কিছুদিন পর নিজেই নারায়ণগঞ্জে দেওয়ানবাগ নামক স্থানে একটি আস্তানা গঠন করেন এবং নিজেকে সুফি সম্রাট পরিচয় দেন। সর্বশেষ মতিঝিলের ১৪৭ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ এই ঠিকানায় একটি দরবার স্থাপন করেন দেওয়ানবাগী।