দেখতে না দেখতেই বাংলাদেশ যেন ধ্বংসস্তূপ

আগের প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের টপ-অর্ডারকে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামি। দলের অন্য দুই তারকা পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও উমেশ যাদবও তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছিলেন। সবমিলিয়ে দারুণ বোলিং প্রস্তুতি হয়েছিল ভারতের। মঙ্গলবার সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিপক্ষেও দুর্দান্ত সূচনা করেছে ভারতের ফাস্ট-বোলাররা। শামি বোলিংয়ের উদ্বোধন না করলেও ভুবনেশ্বর ও উমেশ মিলে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ৮ ওভারের মধ্যে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছেন দুজনে।

তাতে ৩২৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টাইগাররা দেখতে না দেখতেই পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে ভারত যেন জানান দিয়ে রাখলো ব্যাটিংয়ের মতো তাদের বোলিং লাইনআপও ক্ষুরধার। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৩ ওভারে ৭ উইকেটে ৪৮ রান। উইকেটে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ১৫ ও সানজামুল ইসলাম ১ রানে।

উমেশ ও ভুবনেশ্বর সমান ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। তারা ভাগাভাগি করে যে ছয় ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন তাদের কেউই দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। এরপর আক্রমণে এসে শামিও তুলে নিয়েছেন মুশফিকুর রহীমের উইকেট। তাতে একশ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের প্রস্তুতি ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল ইনিংস ওপেন করেননি। তার পরিবর্তে ইমরুল সঙ্গী হয়েছিলেন সৌম্যর। তবে সৌম্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। আয়ারল্যান্ড সিরিজে টানা দুই হাফসেঞ্চুরি করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেয়া ড্যাশিং ওপেনার আবারো ব্যর্থ হয়েছেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে উমেশ যাদবের বলে উইকেটকিপার দিনেশ কার্তিককে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৭ বলে ২ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। যদিও তার আউট নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। টানা তিন ম্যাচে বলার মতো কিছু করতে ব্যর্থ সৌম্য।

এরপর সাব্বির রহমানও টিকতে পারেননি। ৩ বল খেলে শূন্য রানে বোল্ড হয়েছেন তিনি। তার উইকেটটিও নিয়েছেন উমেশ যাদব। চতুর্থ ওভারেরই পঞ্চম বলে। পরের ওভারে সৌম্য-সাব্বিরকে অনুসরণ করে সাজঘরের পথ ধরেছেন ইমরুলও। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে পুল করতে গিয়ে উমেশকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। তার সংগ্রহ ৭ রান।

নিজের পরের ওভারে তিন বলের ব্যবধানে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেটও তুলে নিয়েছেন ভুবনেশ্বর। সাকিব ৭ রান করলেও মাহমুদউল্লাহ রানের খাতা খুলতেই পারেননি। এরপর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেছেন উমেশ। তিনিও ফিরেছেন শূন্য রানে। তাতে ২২ রানে নেই টাইগারদের ৬ উইকেট। সপ্তম উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধের আভাস দিয়েছিলেন মুশফিক ও মেহেদী। কিন্তু তাদের জুটি ভেঙে দিয়েছেন শামি। মুশফিককে সাজঘরে পাঠিয়েছেন ১৩ রানে।

তাতে বাংলাদেশের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল দাঁড়ায় ২৯ মাত্র! যথাক্রমে যা ৭, ২, ০, ১৩, ৭, ০ ও ০! সেরা ৭ ব্যাটসম্যানের তিনজন ফিরেছেন শূন্য রানে, একজন মাত্র পেরুতে পেরেছেন দুই অংক! অবিশ্বাস্য বটে! ৪৭ রানে এই সাত উইকেট হারানোর পর কোনোমতেই বাংলাদেশের কাছে লড়াই আশা করা যায় না।

এর আগে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে টসে হেরে বিরাট কোহলির ভারত চোখে লাগার মতো ব্যাট করেছে। কোহলি, এমএস ধোনি ব্যাট করেননি। যাদের প্র্যাকটিস বেশি দরকার তাদের ব্যাট করিয়েছে ভারত। তবে আগের প্রস্তুতি ম্যাচ মিস করা রোহিত শর্মা ১ রান করেই রুবেল হোসেন শিকার হন। মোস্তাফিজুর রহমান ১১ রান করা অজিঙ্কা রাহানেকে তুলে নেন এরপর। ১৯ রানে ২ উইকেট হারানো ভারত অবশ্য চাপ ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়ায়।

ওপেনার শিখর ধাওয়ান খেলেছেন ৬০ রানের ইনিংস। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিক ৯৪ রান করে অবসর নিয়েছেন। কেদার যাদবও ৩১ রান দিয়ে গেছেন। মারমার কাটকাট ব্যাটিং ছিল হার্দিক পান্ডিয়ার। ৮০ রানে অপরাজিত থেকেছেন তিনি। রবীন্দ্র জাদেজাও করেছেন ৩২ রান। তাদের প্র্যাকটিসের সামনে শেষটায় বাংলাদেশি বোলাররা খুব চাপে ছিলেন। ভারতের বড় সংগ্রহ গড়ার পথ রুদ্ধ করতে পারেনি সাকিবের দল। এই ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নিয়েছেন বিশ্রাম। সাকিব নেতৃত্ব দিয়েছেন টাইগার দলকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত ৫০ ওভারে ৩২৪/৭ (রোহিত ১, শিখর ৬০, রাহানে ১১, কার্তিক ৯৪, কেদার যাদব ৩১, হার্দিক অপরাজিত ৮০, জাদেজা ৩২, অশ্বিন ৫, ভুবনেশ্বর ৫; মোস্তাফিজ ১/৫৩, রুবেল ৩/৫০, তাসকিন ০/৪৫, মেহেদী ০/৩৯, সানজামুল ২/৭৪, মোসাদ্দেক ০/২৯, সাকিব ০/২৩)।