দেশীয় ঐতিহ্যে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেলের ১৬ স্টেশন

রাজধানীতে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। একে একে স্প্যান বসছে পিলার গুলোতে। তবে এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হচ্ছে স্টেশন। এই স্টেশন সংখ্যা হবে মোট ১৬টি। অর্থাৎ মোট ১৬ স্টপে থামবে মেট্রোরেল।

মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে— উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক। রাস্তার মাঝ বরাবর উড়ালপথে চলবে মেট্রোরেল। জাপান থেকে স্টিল সেট এনে পিলারের উপরে বসানো হবে স্টেশন। মেট্রোরেল কোচের আগেই স্টেশন সেট জাপান থেকে আসবে।

স্টেশন হবে প্রায় দোতলা সমান উঁচু আর দৈর্ঘ্য ১৮০ মিটার। দোতলা উচ্চতার স্টেশনের নিচতলায় হবে টিকিট ক্রয় ও স্বয়ংক্রিয় প্রবেশদ্বার। দুইপাশ থেকে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারবে এ স্টেশনে। এছাড়া স্টেশনগুলোতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাঙালি জাতির কৃষ্টি-কালচার-ঐতিহ্য ও ইসলামিক সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। ১৬টির মধ্যে তিনটি আইকনিক স্টেশন হবে বাকিগুলো হবে সাধারণ।

আইকনিক স্টেশনগুলো উত্তরা (দক্ষিণ), বিজয় সরণি ও মতিঝিলে। এসব স্টেশন এমনভাবে নির্মিত হবে যেন দেখেই বোঝা যায় এটা বাংলাদেশের মেট্রোরেল স্টেশন। দেশের গরম আবহাওয়া ও ভৌগলিক বিষয়ও স্থান পাবে স্টেশনগুলোতে। প্রতিটা স্টেশন হবে আধুনিক ও বিলাসবহুল।

স্টেশনের আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে প্লাটফর্মের ছাদ। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ধবধবে সাদা রঙের বিশেষ ধরনের জ্যামিতিক ধনুকাকৃতির ছাদ দুদিক থেকে সরল রৈখিকভাবে একে অন্যকে ভেদ করে যাবে। অনেকটা মসজিদের মিনার ও শামিয়ানার সংমিশ্রণ। এর মধ্যে কয়েক জায়গায় স্বচ্ছ গ্লাস দেওয়া থাকবে যাতে সূর্যের আলো ঢুকে উভয় পাশের প্লাটফর্মে ছড়িয়ে দিতে পারে।

মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশনের নকশা প্রণয়ন করেছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান জন ম্যাকআসলান প্লাস পার্টনারস (জেএমপিআই)। এদের সঙ্গে ছিলো বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

১৬টি স্টেশন প্রসঙ্গে বুয়েট অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. শামসুল হক বলেন, স্টেশনগুলো হবে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল। আমাদের দেশের ইতিহাস, ইসলামিক কালচার ও সংস্কৃতি শোভা পাবে স্টেশনগুলোতে। বিদেশের যে কেউ স্টেশনগুলো দেখলেই যেন বুঝতে পারে এগুলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এই বিষয়গুলোও থাকবে স্টেশনগুলোতে।

তিনি আরও বলেন, দৃষ্টিনন্দনের পাশাপাশি ফাংশনাল দিক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিভাবে এসব স্টেশন থেকে মানুষ অন্যান্য গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন সেই বিষয়ে। স্টেশনের জন্য কোথাও যেন জটলা তৈরি না হয়, এসব বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সবকিছুই ঠিকঠাকভাবে করা হচ্ছে মানুষকে যাতায়াত সুবিধা দেওয়ার জন্য।

স্টেশনগুলোতে মানুষের ধারণক্ষমতা প্রসঙ্গে এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের কথা মাথায় রেখেই ১৬টি স্টেশন হবে। আমরা গতির কথা ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বলছি। কিন্তু কয়েক কিলোমিটার দূর দূর স্টেশন। সুতরাং ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতি তোলা যাবে কি না সন্দেহ। ফলে যে ধারণক্ষমতা নিয়ে স্টেশনগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে তা পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা যাবে কি না সন্দেহ থেকে গেছে।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ স্থানে উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুর, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা মেট্রোরেলের কাজ। পিলারের উপর দৃশ্যমান হয়েছে এ মেগা প্রকল্পের স্প্যান। তবে বেশকিছু স্থানে পিলারের উপরে স্প্যান দেখা যাচ্ছে না। এসব স্থানে গ্যাপ রাখা হয়েছে যেমন মিরপুর ১০ নম্বর। যেখানে পিলার নির্মাণ গ্যাপ রয়েছে সেখানে স্টেশন নির্মাণ পরিকল্পনার জন্যই রাখা হয়েছে। এছাড়া উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, কাজীপাড়া, তালতলা ও আগারগাঁওয়ে গ্যাপ রয়েছে।

পিলার মাঝ বরাবর নির্মাণ করা হলেও এসব স্থানে সড়কের দুই পাশ ঘেঁষে কলাম নির্মাণ করা হয়েছে। দুই পাশের কলামের মাঝ বরাবর রয়েছে তিনটা পিলার।

ইতোমধ্যেই স্টেশন নির্মাণের জন্য উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার) ও উত্তরা (দক্ষিণ) এলাকায় পিলার শতভাগ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। এসব স্থানে স্টিলের স্টেশন বসানো হবে। স্টিলের নির্মিত স্টেশন সেট জাপানে তৈরি হচ্ছে। এখানে এনে পিলারের উপরে বসিয়ে দেওয়া হবে। তবে পল্লবী, মিরপুর-১০, মিরপুর ১১, কাজীপাড়া, তালতলা ও আগারগাঁওয়ে এখনও স্টেশনের পিলার নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি।

ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়, স্টেশনগুলোর দুই পাশে প্লাটফর্ম বরাবর নিরাপত্তার জন্য শক্ত গ্লাস দিয়ে মোড়া থাকবে। মেট্রোরেল স্টেশনে যাত্রীদের অনায়াস ওঠানামা নিশ্চিত করতে থাকছে ছিমছাম ও সর্বাধুনিক দুটি এলিভেটর (চলন্ত সিঁড়ি)। মাথার উপরে মেট্রোরেল স্টেশন, নিচ দিয়ে সড়ক ধরে চলাচল করবে যানবাহন ও ফুটপাথ দিয়ে পথচারী।

মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) খান মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, দ্রুত এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের কাজ। স্টেশন নির্মাণ কাজও দ্রুত হচ্ছে। যেখানে গ্যাপ রয়েছে সেখানে শুধু স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পিলার নির্মাণ কাজ শেষ হলেই জাপান থেকে রেডিমেট স্টিলের স্টেশন চলে আসবে। আমরা শুধু পিলারের উপরে স্টিলের রেডিমেট স্টেশন সেট বসিয়ে দেবো।