দেশের প্রথম প্রিপেইড মিটার উৎপাদন শুরু আগামী মাসে

দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার তৈরির কারখানায় উৎপাদন শুরু হচ্ছে আগামী জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। এরই মধ্যে কোম্পানি গঠনসহ উৎপাদনের যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, দেশে প্রথম বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার তৈরির লক্ষ্যে যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ও চীনের হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড।

ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী কোম্পানির নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড’। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি অনুমোদন পায়। খুলনা মহানগরীর মোহাম্মদনগরে প্রাথমিকভাবে এই কাজ শুরু হয়।

পরে নগরীর শেখপাড়ায় ওজোপাডিকোর নিজস্ব জায়গায় স্থায়ীভাবে উৎপাদন কারখানা নির্মাণ করা হবে। এই কাজের জন্য ২৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কমপক্ষে ২০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। কারখানা থেকে দুই শিফটে ১০ লাখ মিটার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওজোপাডিকোর কোম্পানি সচিব আবদুল মোতালেব জানান, এ কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বর্তমান বাজারমূল্য থেকে কম মূল্যে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সরবরাহ করা সম্ভব হবে। উৎপাদিত স্মার্ট প্রিপেইড মিটার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। এ ছাড়া উৎপাদিত মিটার ব্যবহারের ফলে বিদেশ থেকে মিটার আমদানির প্রয়োজন হবে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। কারিগরি বিষয়েও অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।

ওজোপাডিকোর এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এই মিটার ব্যবহার করার জন্য কোনো ধরনের সার্ভিস চার্জ দিতে হবে না। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু লোক মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করছে। একই সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওজোপাডিকোর মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২১টি জেলা ও ২০টি উপজেলা সদরে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৯ গ্রাহককে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, আধুনিক ও আরো মানসম্মত সেবা প্রদান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার সব বিদ্যুৎ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওজোপাডিকোর আওতায় ১৪ লাখ ৬৮ হাজারটি প্রিপেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৪টি প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের আঙিনায় স্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩৬টি মিটার আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে স্থাপন করা হবে।

সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক (২০১৬-২০২০) পরিকল্পনায় সারা দেশে ৭৫ লাখ ইলেকট্রোমেকানিক্যাল বা ডিজিটাল এনার্জি মিটারের পরিবর্তে প্রিপেইড মিটার বসানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত পরিকল্পনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে দুই কোটি ৮৭ লাখ প্রিপেইড মিটার বসানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আওতায় এখন পর্যন্ত ১৬ লাখ সাত হাজার ৫৮৪টি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। পরে আরো দুই কোটি ৭০ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬টি প্রিপেইড মিটার বসানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সব প্রিপেইড মিটার বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়সহ অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া কারিগরি বিষয়ে রপ্তানিকারক দেশের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ওজোপাডিকো ও চীনের হেক্সিং কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে সরকারের অনুমোদনক্রমে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার উৎপাদন ও তৈরি করার জন্য কোম্পানি গঠন করা হয়েছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন জানান, এই কোম্পানির মাধ্যমে উৎপাদিত স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বাংলাদেশে সব বিদ্যুৎ গ্রাহককে সহজে সরবরাহ করা যাবে। ফলে আমদানির জন্য সময় নষ্ট হবে না। এ কোম্পানির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ওজোপাডিকো। বাংলাদেশও স্মার্ট প্রিপেইড মিটার উৎপাদন ও বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানে এবং কারিগরি জ্ঞান অর্জনে স্বনির্ভর হবে।