দেশে ফিরেও যেসব ধকল যাবে অভিনন্দনের ওপর

পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশে ভারতীয় যুদ্ধবিমান নিয়ে অনুপ্রবেশ করে পাক সেনাবাহিনীর হাতে ধৃতের প্রায় আটচল্লিশ ঘণ্টা পর দেশে ফিরেছেন ভারতের বিমানবাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। তার আগমন উপলক্ষে সারা দেশজুড়ে উৎসবের আবহ বিরাজ করছে। অভিনন্দনকে স্বাগত জানাতে ওয়াঘা সীমান্তে ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তান তাকে ভারতের হাতে তুলে দিলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন এই পাইলট?

পাইলট অভিনন্দন বর্ধমানের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলেছে ভারতের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছেন অভিনন্দন বর্তমান। ১৯৭০ সালে তৈরি পুরনো মিগ-২১ নিয়ে অত্যাধুনিক পাক-যুদ্ধবিমান এফ-১৬কে তাড়া করে সে দেশে ঢুকে পড়েন তিনি। এর জন্য অবশ্যই প্রশংসা প্রাপ্য তার। কিন্তু শত্রুদেশের হেফাজত থেকে ফিরেছেন, দফায় দফায় জেরার মধ্য দিয়ে যেতেই হবে তাকে।

দেশটির বিমানবাহিনীর তরফ থেকে যদিও এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি, তারপরও অভিনন্দন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন, সংস্থাটির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

আনন্দবাজার জানিয়েছে, ওয়াঘা সীমান্ত থেকেই বাড়ি ফিরতে পারবেন না অভিনন্দন। বরং সেখান থেকে সরাসরি বিমানবাহিনীর গোয়েন্দাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে। বেশ কিছু ডাক্তারি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে অভিনন্দনকে। তার ফিটনেসের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। বন্দীদের শরীরে অনেক সময় মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেয়া হয়, যার মাধ্যমে আড়ি পেতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয় শত্রুপক্ষ। অভিনন্দনের শরীরে সেরকম কোনো চিপ বসানো হয়েছে কিনা, তা স্ক্যান কেরে দেখা হবে। মনোবিদের কাছেও নিয়ে যাওয়া হবে অভিনন্দনকে। বন্দী থাকা অবস্থায় ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা-সংক্রান্ত তথ্য হাতাতে শত্রুপক্ষ তাকে অত্যাচার করেছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা হবে। পাকিস্তানে কোনো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেয়া হবে।

অভিনন্দনকে জেরা করতে তলব করা হতে পারে ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) কর্মকর্তাদের। তবে সচরাচর পাইলটদের তাদের হাতে তুলে দেয় না বিমানবাহিনী। তাই অভিনন্দনের ক্ষেত্রে তা না-ও হতে পারে।

পাকিস্তানে পা রাখা থেকে ওয়াঘা সীমান্ত পার করা, গোয়েন্দাদের প্রতি মুহুর্তের সবিস্তার বর্ণনা দিতে হবে অভিনন্দনকে। বন্দী অবস্থায় তার কাছে কী কী জানতে চাওয়া হয়, তা জানাতে হবে তাকে। পাক সেনাবাহিনী তার মিগকে নিশানা করতে করে কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, তা-ও জানার চেষ্টা করা হবে। তার সঙ্গে থাকা কোন কোন নথি তিনি নষ্ট করতে পেরেছিলেন এবং কী কী নথি পাক সেনার হাতে পৌঁছেছে তারও তালিকা তৈরি করা হবে।

শত্রুপক্ষের হাতে বন্দী ছিলেন অভিনন্দন। সেখানে তাকে আপসের কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল কিনা, তাকে ব্যবহার করার কোনো চক্রান্ত হয়েছি কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবেন গোয়েন্দারা। এই গোটা পদ্ধতিকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ডিব্রিফিং’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেরা এবং ডাক্তারি পরীক্ষায় নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রমাণ না করতে পারলে আর কোনোদিনই হয়তো যুদ্ধবিমানে সওয়ার হতে পারবেন না অভিনন্দন। সে ক্ষেত্রে ডেস্কের কাজে বসিয়ে দেয়া হতে পারে তাকে। তবে তার সঙ্গে কোনোরকম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না। খেয়াল রাখা হবে-কোনো পরিস্থিতিতেই তাকে যেন অসম্মানিত হতে না হয়।