দেশে ফিরে আসুন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের মন্ত্রী

বাংলাদেশে সফররত মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আয়ে বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ডসহ রোহিঙ্গাদের নাগরিক নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কথা উল্লেখ করে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে (মিয়ানমারে) ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

উইন মায়াত আয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ মর্যাদা ও অধিকার বিষয়ে মিয়ানমার সচেষ্ট থাকবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনকালে মিয়ানমারের মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রায় আট মাস আগে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর মিয়ানমারের কোনো মন্ত্রী কিংবা প্রতিনিধিদল প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারে এলেন।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খ শোয়ে বাংলাদেশে সফরে এলেও কক্সবাজার যাননি। ঢাকায় বসে আলোচনা শেষে ফিরে যান তিনি।

বেলা ১১টার পর ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছান মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আয়ে। তিনি প্রথমে ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। পরে কুতুপালং ক্যাম্পের ডি-৫ ব্লকের ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। এসময় রোহিঙ্গারা তাদের দাবি-দাওয়া মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, কক্সবাজারস্থ আরআরআরসি কমিশনার আবুল কালাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহিদুর রহমান, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী রবিনসহ সংশ্লিষ্টরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানে নামে দেশটির সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা। তারা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। হত্যা করা হয় শত শত রোহিঙ্গাকে। ধর্ষণের শিকার হন বহু রোহিঙ্গা নারী।

নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশমুখী ঢল নামে লাখ লাখ রোহিঙ্গার, যে সংখ্যা সাত লাখের মতো। তাদের আশ্রয় হয়েছে কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলায় আশ্রয় শিবিরে।

রোহিঙ্গাদের স্রোত শুরু হওয়ার পর বিষয়টি জাতিসংঘে তোলে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও প্রথমে রোহিঙ্গা নির্যাতনের কথা স্বীকার না করলেও পরে ‘কিছু হত্যার’ বিষয়টি স্বীকার করেন দেশটির সেনাপ্রধান।

আর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে দেশটির সঙ্গে প্রথমে সমঝোতা স্মারক এবং পরে ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট নামে চুক্তিও হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বান্দরবান সীমান্তে দুই দেশের শূন্য রেখায় অবস্থানকারী আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকাও দেয়া হয় মিয়ানমারকে। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে ৩৭৪ জনকে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।