দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার

বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর আড়াই শতাংশেরও কম মানুষ কর্মসংস্থানের বাইরে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা শ্রম জরিপের রিপোর্টে দেখা যায় মানুষের কাজের ধরণ অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষম ১০ কোটি ৯১ লাখ। এদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার।

জরিপ অনুযায়ী, পুরুষের তুলনায় নারীরা ইদানীং বেশি হারে চাকরি পাচ্ছে। আবার কৃষি থেকে শ্রমিকরা শিল্প এবং সেবাখাতের দিকে ঝুঁকছে।

বাংলাদেশে যত জনশক্তি রয়েছে তাদের মধ্যে কৃষিতে কর্মসংস্থান ২৩ শতাংশ (দুই কোটি ৪৭ লাখ), শিল্পে ১১ শতাংশ (এক কোটি ২৪ লাখ), সেবা খাতে ২২ শতাংশ (দুই কোটি ৩৭ লাখ) এবং অনান্য খাতে ৪২ শতাংশ (চার কোটি ৫০ লাখ)

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ করা হয়।

জরিপ অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৩ লক্ষ মানুষ চাকরির পেয়েছে। একই সময়ে বিদেশে চাকরি হয়েছে আরও ১০ লাখের। এর বাইরে ১৪ লাখ মানুষ আগে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করলেও এই সময়ের মধ্যে মজুরির আওতায় এসেছে। সব মিলিয়ে ওই অর্থবছরের মোট ৩৭ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, আইএমইডি সচিব মো: মফিজুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহমদ।

কবির উদ্দিন আহমদ জানান, ধীরে ধীরে শ্রমের রূপান্তর ঘটছে। এক সময় কৃষি নির্ভরতা থেকে বর্তমানে সেবা ও শিল্পের দিয়ে যাচ্ছে কর্মসংস্থান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে নিয়োজিত ছিল দুই কোটি ৫৪ লাখ মানুষ। সেখান থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমে গিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৪৭ লাখ।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সেবা খাতে। গত অর্থবছরে সেবা খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে দুই কোটি ৩৭ লাখ। তার আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল দুই কোটি ২০ লাখ।

এছাড়া শিল্প খাতে গত অর্থবছরে নিয়োজিত ছিল এক কোটি ২৪ লাখ, তার আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল এক কোটি ২২ লাখ।

দেশে মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতের। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সংখ্যা মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

মোট কর্মসংস্থানের এক তৃতীয়াংশ মানুষের আনুষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই।

প্রায় এক কোটি ৫৭ লাখ কর্মজীবী মানুষের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত। এক কোটি ৮৭ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরনো মানুষ। বাকিটা উচ্চশিক্ষিত।

প্রতিবেদনে এবারই নতুনভাবে তুলে আনা তথ্যে দেখা যায়, বিগত এক বছরে কর্মক্ষম কিন্তু বেকার, খণ্ডকালীন কর্মী এবং যারা জরিপের সময় থেকে তার আগের এক মাসে কাজ খুঁজেনি, কিন্ত কাজ দিলে করতে প্রস্তুত এমন মানুষের সংখ্যা কমেছে।

গত অর্থবছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখে, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৭১ লাখ ছিল। অর্থাৎ পূর্ণকালীন কাজে কর্মক্ষমতা ব্যবহারের হার বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিবারে মজুরি ছাড়া কাজ করতেন এমন মানুষের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। অর্থাৎ বেশি সংখ্যক নারী উপার্জন হয় এমন কাজে যুক্ত হচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে যাচ্ছে। এর প্রতিফলন শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যাচ্ছে। কৃষি খাত থেকে মানুষ আস্তে আস্তে শিল্প ও সেবা খাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে এই দুই খাতে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে।’

অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘নারীর সত্যিকার ক্ষমতায়নের চিত্র উঠে এসেছে জরিপে। শ্রমশক্তিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণের হার অধিকহারে বাড়ছে। এটা গর্ব করার মতো বিষয়।’