দোয়েল চত্বরে আন্দোলনকারী-পুলিশ সংঘর্ষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার সকাল থেকে সেখানে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে কার্জন হল ও দোয়েল চত্বর এলাকায় অবস্থান নিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

এ সময় আন্দোলনকারীরা কমিশনারের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ করে তার বিচার চান।

তখন আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে আপনাদের কথা দিচ্ছি, আর একটি টিয়ারশেলও মারবে না পুলিশ। আপনারাও ইটপাটকেল মারবেন না। পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে চলে যাবে।

আলোচনার মাধ্যমে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচার করা হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে ডিএমপি কমিশনার দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগের দিকে চলে যান।

কমিশনার চলে যেতেই সকাল সাড়ে ৭টায় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন পুলিশ সদ্যরা। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপের পাশাপাশি লাঠিপেটা করতে থাকে। এ নিয়ে উভয়েপক্ষে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে, যা একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

পরে শিক্ষার্থীদের পিছু হটে কার্জন হল ও জিমনেশিয়ামের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। সকাল ৯টায় সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া পদযাত্রাকে ঘিরে ক্যাম্পাস উত্তাল রয়েছে।

হাজার হাজার আন্দোলনকারী ক্যাম্পাস থেকে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

বিকালে শুরু হওয়া রাত ৮টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যান আন্দোলনকারীরা।

একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়া শুরু করে; অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করে লাঠিপেটা।

পুলিশের হামলার মুখে কয়েক মিনিটের মধ্যে শাহবাগ মোড় থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান আন্দোলনকারীরা। সড়ক হয়ে যায় ফাঁকা।

পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হওয়ার সময় কর্তব্যরত কয়েকজন সাংবাদিককেও লাঠিপেটা করে। ওই সময় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে পাঁচ সংবাদকর্মী ঢাকা ট্রিবিউনের ফাহিম রেজা নূর, প্রথম আলোর আসিফুর রহমান, ইউএনবির ইমরান হোসেন, বাসসের কামরুজ্জামান রেজা এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তারেক হাসান নির্ঝরের ওপর পুলিশ হামলা চালায়।

পুলিশের ধাওয়ায় আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঢুকে পড়ে চারুকলার সামনে অবস্থান নিয়ে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন পাবলিক লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নিয়ে থেমে থেমে তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছিল পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ এগিয়ে এসে রবার বুলেট ছুড়তে থাকে।

পুলিশের আক্রমণে পিছু হটে আন্দোলনকারীরা টিএসসির দিকে সরে এলে তাদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। ভিডিও ধারনের সময় এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোনটিও ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ভেঙে দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

রাত পৌনে ৯টার দিকে বিক্ষোভ স্তিমিত হয়ে এলেও পৌনে ১০টার দিকে আবার শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে টিএসসিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর পর দফায় দফায় রাতভর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলে।

রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে।

এ সময় আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতর তছনছ ও ব্যাপক ভাঙচুর করেন।

বিপুলসংখ্যক পুলিশ নীলক্ষেতের দিক দিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতর প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

ওই সময় কলাভবন ও মল চত্বর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।