দৌড়ে ছিনতাইকারী ধরা অন্তরার সাহসিকতার গল্প

ছুটির দিনের সন্ধ্যা। শত শত মানুষের অবাক চোখ। রাস্তা দিয়ে এক যুবক দৌড়ে পালাচ্ছে। ওই যুবকের ঠিক পেছনে পেছনে ছুটছেন এক তরুণী। যেন পণ করেছেন, যুবককে ধরবেই।

পাঠক, ভাবতে পারেন- এ কোনো নাটক বা সিনেমার দৃশ্য। কিন্ত না, ঢাকার রাস্তায় দৌড়ে পালানো ওই যুবক আসলে একজন ছিনতাইকারী। আর তাকে ধাওয়া করা তরুণী অন্তরা রহমান। একটি ল’ফার্মে চাকরি করেন।

সাহস নিয়ে সেই ছিনতাইকারীকে ধরে থানায় সোপর্দ করেছেন তিনি। এ অদম্য সাহসিকতার জন্য অন্তরা পেয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অভিনন্দন বার্তা ও পুরস্কার।

অন্তরা রহমান। রাজধানীর বনশ্রীতেই মা আর ভাই-বোনের সঙ্গে বসবাস করেন। বাবা বিদেশে থেকে চাকরি করেন।

গত ১৭ আগস্ট (শুক্রবার) সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে। নাটকীয় সেই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অন্তরা রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ওই দিন যাত্রাবাড়ির জনপথ মোড়ের আইডিয়াল স্কুলের সামনে রিক্সা থেকে এক ছিনতাইকারী আমার হাত ব্যাগটি নিয়ে দৌড় দেয়, আমি ভয় না পেয়ে ছিনতাইকারীর পেছনে ধাওয়া করি। যেহেতু ছিনতাইকারীর মুখটা আমি দেখি নাই, তাই ছিনতাইকারীর গায়ের পোশাক চিনে রাখি।

‘এক পর্যায়ে একটি গাড়ি ছিনতাইকারী উঠে পড়লে আমিও সেই গাড়িতে উঠি, গাড়িতে ড্রাইভার হেল্পার ছাড়া যাত্রী ছিল না।’

আমি গাড়িতে উঠতেই হেল্পার জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? আমি তাকে বলি, একটু আগে কোনো লোক এই গাড়িতে উঠেছে কিনা?

সে উত্তরে বলে, এই বাসে না অন্য কোনো বাসে দৌড়ে উঠতে দেখেছি।

‘কিন্তু আমি বাসের শেষপ্রান্তে লক্ষ্য করলাম, একজন বসে আছে। তার গায়ে থাকা পোশাক আমার ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে আসা লোকটির পোশাকের সঙ্গে মিলে যায়। আমি তার কাছে গিয়ে দেখি আমার ব্যাগের উপরে সে বসে আসে। আর আমার মুঠোফোনটি তার পায়ের নিচে।’

অন্তরা বলেন, আমি চিৎকার করে গাড়ি থামাই, এক পর্যায়ে কয়েকজন তরুণ ওই গাড়ি উঠে আসলে তাদেরকে ঘটনা খুলে বলি। এরপর ছিনতাইকারীকে নিয়ে যাত্রাবাড়ি থানায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করে একটি মামলা করি।

‘গাড়ি ধরা পড়ার পর ছিনতাইকারী বারবার বলছিল, তাকে যেন পুলিশে না দেই, একদিন আগেই নাকি সে হাজত থেকে ছাড়া পেয়েছে, আমি চিন্তা করলাম একদিন আগে যে হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে নিজেকে শোধরাতে পারে নি, তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতেই হবে।’

ছিনতাই রাজধানীর ঢাকার বুকে নতুন কিছু নয়, তবে ছিনতাইকারীর পেছনে ছুটে তাকে পাকরাও করে পুলিশে কাছে তুলে দেওয়ার মধ্যে নতুনত্ব আছেই।

কোন ভাবনা থেকে একজন ছিনতাইকারীর পিছু ধাওয়া করলেন? জানতে চাইলে অন্তরা বলেন: আমার মধ্যে কোনো ভয় ছিল না, আমি চিন্তা করেছিলাম ছিনতাইকারীকে ধরতেই হবে, হয়তো ধরতে গিয়ে আমার হাত পা কাটবে, অল্প ব্যথা পাব কিন্তু ছিনতাইকারীকে ছাড় দেওয়া যাবে না। ছাড় পেয়ে গেলেই আবার সে আরেকজনের সঙ্গে একই কাজ করবে।

এমন সাহসিকতার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও পুরস্কারও পেয়েছেন অন্তরা রহমান।

মঙ্গলবার ( ১১ আগস্ট) ঢাকা মহানগর পুলিশের মাসিক অপরাধ সভায় তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

সেসময় ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ছিনতাইকারী তার ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গেলে তিনি নিশ্চুপ না থেকে অত্যন্ত সাহস নিয়ে ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে ধরে পুলিশের নিকট সোপর্দ করেন। যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

‘আশা করি এই সাহসী অন্তরার মত সকলে সাহসী হয়ে অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। অন্তরা বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

পুলিশ না হয়েও পুলিশের কাজ করলেন, পেলেন পুরস্কারও। কেমন লাগছিল সেসময়?

জবাবে অন্তরা রহমান বলেন: আসলে আমি ওই দিন থানায় যাওয়ার পর থেকেই ওসি কাজী ওয়াজেদের সাহায্য পাই। একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে থানা পুলিশের কাছ থেকে সাহায্যটা আমার মনে থাকবে। চলতি সপ্তাহে ওসি ওয়াজেদ ফোন দিয়ে আমাকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে যেতে বলেন, আমি তখনও জানতাম না এ রকম কোন চমক আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন: আসলে পুরস্কারের আমি ব্যাপারে কোনো কৃতিত্ব নিতে চাই না, আমাকে ওই মুহুর্তে অনেকেই সাহায্য করেছে সব কৃতিত্ব ওই নাম না জানা মানুষগুলোর।

‘আমি শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি, হাত গুটিয়ে বসে থাকি নি। যা কি না আমি ছোট বেলা থেকেই করে আসছি।’