দ্রুত কি জনপ্রিয় হতে চাইছেন মেয়র আতিকুল?


১০ দিন আগে নির্বাচিত হন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম৷ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আতিকুল আগেও পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠনের নেতৃত্ব দেন৷ প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকও ছিলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী৷ ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়৷


আতিকুল অবশ্য দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই বেশ কয়েকটি কর্মকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন৷ বলা হচ্ছে, তিনি কি আনিসুল হকের মতো জনপ্রিয় হতে দ্রুত কিছু একটা করার চেষ্টা করছেন?

মেয়র স্বয়ং এ সব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন৷ তাঁর দাবি, জনপ্রিয় হতে নয়, রাজধানীর মানুষের জন্য তিনি সত্যিই কিছু করতে চান৷ আর সেই চেষ্টাই করছেন তিনি৷

কী করতে চাচ্ছেন মেয়র?

নির্বাচিত হয়েই ময়লা পরিষ্কার কর্মসূচির উদ্বোধন করতে গিয়ে বিতর্কের মধ্যে পড়েন মেয়র আতিকুল ইসলাম৷ ১৭ মার্চ তেজগাঁও এলাকা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান মেয়র৷

সেখানে আগে থেকে ময়লা ফেলে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শফিকুর রহমান৷ পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ এই ঘটনার জন্য অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন মেয়র৷ বাস চাপায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সেখানে উপস্থিত হয়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছেন৷ এমনকি সেটা নিহত শিক্ষার্থীর নামে করার কথাও বলেছেন তিনি৷ পরের দিন, অর্থাৎ বুধবার, পুলিশ কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে ফুটওভার ব্রিজটির স্মৃতি ফলকের উদ্বোধন করেছেন৷ এরপরও প্রশ্ন উঠেছে, এতে কি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ হবে?

এই ঘটনাগুলোর ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘‘কিছু সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করতে হয়৷ শুধু একটা নয়, আরো অনেক ফুটওভার ব্রিজ করা দরকার৷ আমি তাই বিত্তবানদের আহ্বান জানাবো, আপনারা এ সব কাজে কিছু টাকা ব্যয় করুন৷ ফুটওভার ব্রিজটি আপনার নামে হবে৷”

প্রয়াত মেয়রের পরিকল্পনাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করছেন? জানতে চাইলে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন যে, তিনি অনেক কিছুই শুরু করেছেন, যা এখন চলমান৷ আর সেগুলো শেষ করারই চেষ্টা করছেন তিনি৷ নেতৃত্বহীনতার কারণে অনেক প্রকল্প নাকি সামনে এগোচ্ছিল না৷ এবার সেগুলো শেষ হবে৷

আপনার পরিকল্পনা কী? জবাবে মেয়র বলেন, ‘‘আমি স্মার্ট সিটি করতে চাই৷ সব গ্রাহক যেন অনলাইনে ‘ট্যাক্স’ দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছি৷ অ্যাপের মাধ্যমে কোনো এলাকার সমস্যার কথা মানুষ যেন লিখে বা ছবি তুলে দিতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে চাই৷”

সামনে সময় তো খুব কম? কীভাবে এগুলো শেষ করবেন? জানতে চাইলে জনাব আতিকুল বলেন, ‘‘স্বল্পমেয়াদি কাজগুলো শেষ করতে চাই৷ আর দীর্ঘমেয়াদি কাজগুলো পরে যিনি আসবেন তিনি শেষ করবেন৷”

কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ মেয়রের

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, কিছু কর্মকাণ্ডে হয়ত আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে৷ কিন্তু তারপরও বলব, এখন মূল্যায়ন করার সময় হয়নি৷ প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যে কাজগুলো শেষ করতে পারেননি, সেগুলো প্রথমে শেষ করতে হবে৷ পাশাপাশি নিজের পরিকল্পনাও দরকার৷ ওনার সামনে সময় খুবই কম৷ এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করা যাবে না৷ নিরাপদ রাজধানী করতে স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তাঁকে সামনের দিকে এগোতো হবে৷ আবার চাটুকররা তাঁকে যেন ঘিরে ফেলতে না পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে৷

দীর্ঘদিন ধরে নগর বিষয়ক সাংবাদিকতা করছেন অমিতোষ পাল৷ তিনিও আলাপকালে বলেন, ‘‘মেয়রের যে আন্তরিকতা আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে৷ কিন্তু অতিউৎসাহী কিছু কর্মকর্তা বা ব্যক্তির কারণে তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন৷ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মেয়র কিন্তু একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন৷”

মেয়র কি দ্রুত জনপ্রিয় হতে চাইছেন? জবাবে অমিতোষ পাল বলেন, ‘‘বিষয়টা ওভাবে দেখা যাবে না, কারণ সময় গেল মাত্র ১০ দিন৷ এখন মূল্যায়ন করা ঠিক না৷ আমাদের তাঁকে কিছুদিন সময় দিতে হবে৷ তখন হয়ত আমরা মন্তব্য করতে পারব৷ এখন আসলে তাঁকে দিক নির্দেশনা দেওয়া দরকার৷ ভালো কাজে সমর্থন দেওয়া দরকার৷”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেনের কথায়, ‘‘রাজধানীর সমস্যা কী তা সবাই জানেন৷ এখন দরকার উদ্যোগ৷ উন্নত দেশগুলো দেখলে তো আমরা বুঝতেই পারি যে মেয়রকে কী করতে হবে৷”

তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত ওনার যেটা করা দরকার, সেটা হলো, রাস্তায় একটা শৃঙ্খলা আনতে হবে৷ সেটা উনি একা না পারলে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়েই কাজটা করতে হবে৷ প্রতিদিন বাস চাপায় মানুষ মারা যাবে, এটা হতে পারে না৷ কী কারলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে, সেটা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে সমাধান চাই আমরা৷ ঘটনা ঘটে গেলে শুধু আশ্বাস, পরে কিছুই নেই, তা তো হতে পারে না৷’’