ধর্ম ও সভ্যতার দৃষ্টিতে বিকৃত পাপ

সাফাত জামিল : চিকিৎসাশাস্ত্রে ‘হিস্ট্রি অভ এক্সপোজার’ বলে একটা টার্ম আছে।এই বিষয়টি জানবার জন্য রোগীকে কিছু প্রশ্ন করতে হয়।বাইরের মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করেন কিনা জিজ্ঞেস করলে রোগী প্রথম আকাশ থেকে পড়ে। চিকিৎসকের নানাবিধ জেরায় শেষপর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়- হ্যাঁ মেলামেশা করি মাঝেমধ্যে।

ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অবাধ যৌনতার বিলাসিতায় বাইরের ‘প্রাইভেট সঙ্গিনী’ কিংবা পতিতাদের সংস্পর্শে যান অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু মনের অজান্তেই এরা পতিতার শরীর থেকে নিজ শরীরে রোগ জীবাণু (ট্রিপোনেমা পেলিডাম) বহন করে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে নিজে সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হয় এবং সঙ্গমের মাধ্যমে তার নিরপরাধ স্ত্রীকে সংক্রামিত করে।একটি সুস্থ মানুষের দেহে ছড়িয়ে দেয় নিজের অবৈধ কর্মের বিষ।

বর্তমান বাংলাদেশে প্রায়শই পরিলক্ষিত হচ্ছে মৃত কিংবা বিকলাঙ্গ শিশু জন্মানো, যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলছে।
জ্বর, গলায় ব্যথা, নিস্তেজ ভাব, হাত ও পায়ে বেদনা, রক্তসল্পতা, শিরঃপীড়া ও ওজন হ্রাসসহ নানারকম পীড়ায় ভুগে ধীরে ধীরে রোগী মৃত্যুবরণ করেন। এ রোগের নানারকম উপসর্গ রয়েছে, তবে সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে এটা টানা ১-৪০ বছর বা তারও বেশি সময় “সুপ্তাবস্থায়” থাকতে পারে।

কিছু মানুষ প্রায় সব সময়ই তীব্র যৌন চাহিদা অনুভব করে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হঠাত করে যৌন চাহিদা খুব বেশি বেড়ে যায়। অনেকে আবারবারবার যৌন মিলন করেও মানসিক তৃপ্তি লাভ করে না। এ ধরনের অবস্থাকে হাইপার “সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার” বলা হয়।যৌনতায় মজে থাকা বা দিনরাত যৌনতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা৷ আর এই প্রথমবার যৌন আসক্তিকে মানসিক অসুস্থতা বলে চিহ্নিত করে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)৷ডা: বুথ নামে এক মনোবিদ জানিয়েছেন, কিছু মানুষের জীবনের ‘সেন্ট্রাল ফোকাস’ হচ্ছে সেক্স৷ এর জেরে অন্যান্য সব কিছুকে অবজ্ঞা করা শুরু করে৷ যা থেকে পরবর্তীকালে মানসিক হতাশা আসতে পারে৷

সাইকোলজিক্যাল দিক থেকে ভাবলে বিষয় হল মানুষ যা শেখে, ভাবে, সেটাই সে বিশ্বাস করে।এদেশে উপযুক্ত শিক্ষা এবং সামাজিক জ্ঞানের অভাবে ছেলেরা মেয়েদেরকে সেক্স অবজেক্ট জেনে বড় হয়। এদিকে আশংকাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে ধর্ষণ। শুধু দৃষ্টি ভঙ্গি আর শিক্ষার কারনে উন্নত দেশগুলোতে ধর্ষণ এর হার এত কম, সেই শিক্ষা থেকে বোঝা যায় আমরা যদি ওদের এই দিকটা ফলো করি তবে আমাদের দেশেও ধর্ষণ ওদের মত অনেক কমে যাবে।

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, যৌন তাড়না ও যৌন আচরণের ওপর ‘তীব্র নিয়ন্ত্রণের’ ব্যর্থতার কারণে যে কোনো মানুষের মধ্যে এই আসক্তি তৈরি হয়ে যায়। যৌন আসক্ত ব্যক্তির জীবনে সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুই হয়ে দাঁড়ায় যৌনতা। এতে মানুষের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ব্যক্তিগত দায়িত্বজ্ঞানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত হার্টে সমস্যা দেখা দিলে যৌন ক্ষমতা দশভাগেরও নিচে নেমে যায়। যৌনতার সময়ে শরীরে অস্বাভাবিক খিচুনী আসে যা রোগীদের বুকের ব্যথা বা হার্ট পেইনকে বাড়িয়ে দেয়।বিশ্বে প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি মানুষ যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ব্যক্তির মানসিক বিকৃতি, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, সামাজিক সচেতনতা শূণ্যের কোঠায় নেমে যাচ্ছে দিনের পর দিন।তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত সবার।

কোন ধর্মই অবাধ যৌনতার বৈধতা দেয়নি। ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থে উল্লেখিত বাণী দিয়ে লেখাটি শেষ করছি।
ব্যাভিচার সম্পর্কে আল কোরআনে বলেছেন “তোমরা অবৈধ যৌন সম্ভোগের নিকটর্বতী হয়ো না। এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরন” ( আল কোরআন ১৭:৩২)।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়