‘ধর্ষক’ তুফানের শ্যালিকা কাউন্সিলর রুমকির পরকীয়া ফাঁস

বগুড়ার ত্রাস হিসেবে পরিচিত সদ্য বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার। সম্প্রতি কিশোরীকে ধর্ষণ এবং মাসহ তার শারীরিক নির্যাতনের পর ন্যাড়া করার ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচিত হয়ে ওঠে এ ঘটনার মূল নায়ক তুফান সরকারের নাম। এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলদার ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে তুফানের পরিবারের সম্পৃক্ততা নেই। তার বড় ভাই আব্দুল মতিন সরকার শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাকে সোমবার সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ ছাড়া তুফানের অন্যতম সহযোগী তার বড় শ্যালিকা পৌর কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি। তুফানকে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেফতারের পর কাউন্সিলর রুমকির পরকীয়াসহ নানা অপকর্মের কথা একের পর এক ফাঁস হচ্ছে। বগুড়া পৌরসভায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গে রুমকির অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। পৌরসভায় রুমকিকে ত্রাস হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। কিন্ত স্বামী-ছেলে সরকারদলীয় নেতা ও বিত্তবান হওয়ায় কোনো কিছু তোয়াক্কা করে না কাউন্সিলর রুমকি। আদালতের দৃষ্টিতে রুমকি মোস্ট ওয়ান্টেড হওয়ায় তাকে সব আসামির চেয়ে বেশি দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

২০১৫ সালে ভগ্নিপতি তুফান সরকারের বাহিনীর সহযোগিতায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন রুমকি। এর পর থেকে রুমকি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। পৌরসভায় সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা নেওয়া এবং পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দুব্যবহার করত। এসব কারণেও কাউন্সিলর রুমকিকে নিয়ে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।

এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, বগুড়া পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো নাগরিক তার বাড়ি নির্মাণ, সংস্কারসহ অন্য কাজ করলে রুমকিকে বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে কাজ করতে দেন না রুমকি। পৌর এলাকায় বিলবোর্ড স্থাপনসহ যে কোনো কাজে তাকে চাঁদা দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ভগ্নিপতি তুফান বাহিনীর ভয় দেখিয়েও কাউন্সিলর রুমকি নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন।

এদিকে ধর্ষণের পর মা-মেয়েকে ন্যাড়া করে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত তুফান ও কাউন্সিলর রুমকি গ্রেফতার হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি বিরাজ করছে। শহরের চকসূত্রাপুর ও বাদুড়তলা এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বললে অনেকে রুমকি, ভগ্নিপতি তুফানসহ অন্যদের গ্রেফতারে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এলাকাবাসী জানান, রুমকি ও তার ভগ্নিপতি তুফানের কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের গ্রেফতার করায় এলাকাবাসী অত্যন্ত খুশি।

এলাকাবাসী ও পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় কিশোরী ধর্ষণ ও তার মাকে শারীরিক নির্যাতনের পর ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনা প্রকাশের পর থেকে কাউন্সিলর রুমকিসহ সব সহযোগীর নানা অপকর্মের কথা বেরিয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় কাউন্সিলর রুমকির অনৈতিক সম্পর্কসহ নানা অপকর্মের কথা এলাকার আকাশে-বাতাসে ভাসছে। কয়েক বছর আগে রুমকি বগুড়া পৌরসভার নগর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পের শহরের বাদুড়তলা কুলিপট্টি সিডিসির ক্যাশিয়ার ছিলেন। সে সময় তিনি শুধু এলাকায় নয়, পৌরসভাতে গিয়েও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করত। এ ছাড়াও বগুড়া পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম রতনসহ একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গে রুমকির অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। পৌরসভা অফিস রুমে গিয়ে পুরুষ কাউন্সিলরদের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে থাকতেন এ রুমকি। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে তার ওপর অন্য নারী কাউন্সিলররা প্রচণ্ড বিরক্ত। এমনকি অনেকে সম্মান রক্ষায় রুমকির সঙ্গে কথাও বলেন না। এসব কারণে প্রভাবশালী এক কাউন্সিলর রতনকে পৌরসভায় আসতে নিষেধ করেন। ফলে কাউন্সিলর রেজাউল করিম রতন পৌরসভায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আসেন না।

পৌরসভার কাউন্সিলর রতন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কাউন্সিলর রুমকির সঙ্গে আমার ভাই-বোনের সম্পর্ক। ছেলে-মেয়ের অসুস্থতার কারণে পৌরসভায় নিয়মিত যেতে পারি না। রুমকির সঙ্গে তার অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ শত্রুতাবশত এসব বলেছেন।

বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান জানান, কাউন্সিলর রুমকির ব্যাপারে এত কিছু আগে জানতাম না। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে।

গত ১৭ জুলাই বিকেলে ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকার। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তিনি ও তার সহযোগীরা এবং স্ত্রীর বড় বোন নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকিকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন। ঘটনার ১০ দিন পর ২৮ জুলাই নির্যাতিতা কিশোরী ও তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চার ঘণ্টা ধরে তারা নির্যাতন চালায়। এরপর দু’জনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন।

এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা সরকার, আশা সরকারের বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলা করেন।

মামলার পর রাতেই তিন সহযোগীসহ তুফানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর রোববার সন্ধ্যায় তুফানের স্ত্রীর বোন কাউন্সিলর রুমকি ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে রোববার তুফান সরকারকে শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার তুফানের বড় ভাই আব্দুল মতিন সরকারকে শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে বহিষ্কার করা হয়।