ধর্ষণ শ্রমিক লীগ নেতাসহ চার জনকে রিমান্ডে পেল পুলিশ

বগুড়ায় কিশোরীকে ধর্ষণ এবং ধর্ষিতা ও তার মাকে নির্যাতনের মামলায় গ্রেপ্তার শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি তুফান সরকারসহ চারজনকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। তাদেরকে সাত দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছিল বাহিনীটি। তবে বিচারক অনুমতি দিয়েছেন তিন দিনের।

রবিবার সকালে পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে বিচারক শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। তুফান সরকার ছাড়া রিমান্ডে যাওয়া অন্য তিনজন হলেন-আলী আজম দিপু, আতিকুর রহমান ও রুপম হোসেন।

তুফান সরকারের বিরুদ্ধে বাড়ি থেকে ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি প্রকাশ হলে শুক্রবার বিকালে ওই কিশোরী ও তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালিয়ে দুই জনের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।

এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা সরকার, আশা সরকারের বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলা করেন।

পুলিশ রাতেই তুফান সরকারসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে। তবে নারী কাউন্সিলর ও তাঁর মা-বোন আত্মগোপন করেছেন। অসুস্থ মা-মেয়েকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর আওয়ামী লীগও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। অভিযুক্ত তুফানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শ্রমিক লীগকে নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর তুফানকে বহিষ্কার করে শ্রমিক লীগ।

বগুড়া সদর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ হোসেন জানান, ‘তুফানসহ গ্রেপ্তার চার আসামিকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পৌর কাউন্সিলর রুমকীসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

পুলিশ জানায়, শহরের বাদুড়তলা এলাকায় কিশোরী মেয়ে এবার এসএসসি পাস করে। কোথাও ভর্তি হতে না পারায় প্রতিবেশী আলী আজম দিপু তাকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেয়ার প্রস্তাব দেন। দিপু ওই কিশোরীকে মোবাইল ফোনে তুফান সরকারের সঙ্গে কথা বলায়। এরপর তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে ওই কিশোরীকে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠান।

কিন্তু ওই কিশোরী ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি দিপুর মাধ্যমে তুফান সরকারকে জানায়। গত ১৭ জুলাই তুফান সরকারওই কিশোরীকে বাসায় ডেকে নেন। দিনভর তাকে সেখানে আটকে রেখে কয়েক দফা ধর্ষণ করার অভিযোগ করে ভুক্তভোগী।

এতে ওই কিশোরী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনাটি ওই কিশোরীর মা জানতে পারে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তুফান সরকারের স্ত্রীর কানে যায়। এরপর শুক্রবার বিকালে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই কিশোরীর বাড়িতে যায়। তারা ধর্ষণের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে ধর্ষিতা ও তার মাকে পৌর কাউন্সিলর রুমকীর অফিস চকসুত্রাপুরে নিয়ে আসে।

সেখানে বিচারের নামে ধর্ষিতাকে যৌনকর্মী আখ্যা দেয়া হয় এবং মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর অভিযোগ আনা হয় মেয়েটির মায়ের বিরুদ্ধে। এরপর তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী লাঠিপেটা করে মা ও মেয়েকে। এরপর তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।