ধ্বংসাত্মক রূপ নিচ্ছে ফণি, বারবার গতিপথ পরিবর্তন

ঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ফণী হতে যাচ্ছে অতি ধ্বংসাত্মক। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়রটির কেন্দ্রের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এটা ১৮০ থেকে ২১০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলে উঠে আসতে পারে।

বাংলাদেশের উপকূল থেকে এর দূরত্ব ধীরে ধীরে কমে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফণী ১২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এটি মাত্র ২০ কিলোমিটার এগিয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ফণী আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি এর গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঠিক হতে পারে কোন এলাকা দিয়ে উপকূলে উঠে আসতে পারে। এটা সামান্য পূর্বদিকে সরে আসলেই বাংলাদেশের সুন্দরবন ও বরিশাল উপকূল দিয়ে উঠে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটা প্রতিনিয়ত গতিপথ পরিবর্তন করে যাচ্ছে।

আমেরিকান আবহাওয়া অফিস ফণী মডেল ও এর গতি সম্বন্ধে জানিয়েছে, উপকূলে উঠে আসার সময় ফণীর গতি হতে পারে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মানুষ যেন সহজে স্মরণ রাখতে পারে সে জন্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হচ্ছে। ফণী নামটি বাংলাদেশের দেয়া। সাপের ফণা থেকে ফণী নামটি দেয়া হয়েছে। এর পরের যে ঘূর্ণিঝড়টি হবে এর নাম ঠিক করে রেখেছে ইন্ডিয়া। সে নামটি হবে বায়ু।

বঙ্গোপসাগরীয় এলাকার ৮ দেশ ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে রেখেছে পর্যায়ক্রমে। এই ৮ দেশ হলো বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড।
১৮৯১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ১৪টি অতি ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি ছাড়া অবশিষ্ট ১৩টিই আঘাত করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলে। এপ্রিল মাসে সংঘটিত দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত করতে যাচ্ছে ভারতের উপকূলে।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল একটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত করে। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ নিহত হয়। এরপর মিয়ানমারে আরেকটি অতি ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় নার্গিস ২০০৮ সালের এপ্রিলে আঘাত হানে। মিয়ানমার সরকারের কড়াকড়ি আরোপের কারণে আহত অথবা নিহতের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। নার্গিস যে এলাকায় আঘাত হানে তা ছিল মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন এলাকা।