নতুনদের সাহিত্য চর্চায় ফেসবুক না লিটল ম্যাগ এগিয়ে?

ঢাকার বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলায় একটি স্টলের নাম পেন্সিল। এটা ফেসবুক ভিত্তিক একটা গ্রুপ। এর সদস্য সংখ্যা এক লাখের বেশি।

এখানে কেউ লেখেন, কেউ ছবি আঁকেন। ফেসবুকে এই পেন্সিল গ্রুপে যারা লেখেন তাদের বই নিয়ে এবারে স্টল দিয়েছে গ্রুপটি।

বিবিসি বাংলার সাথে আলাপকালে পেন্সিলের সদস্য মুরাদ মুস্তাফিজ জানাচ্ছিলেন, “নতুনদের প্রমোট করার জন্য পেন্সিল এবার চিন্তা করেছে যে তাদের মানুষের কাছে এভাবে পৌঁছে দেবো; যেহেতু আমাদের ১ লক্ষ ২৫ হাজার সদস্য আছে।”

“৪৫টা বই বের করা হয়েছে যারা একেবারেই নতুন। আরেকটা সংকলন বের করা হয়েছে যারা এই পেন্সিলে লিখে থাকেন তাদের লেখা নিয়ে।”

তবে মি. মুস্তাফিজ বলছিলেন, ফেসবুকে লিখলেও কাগজে লেখার বই এর আলাদা মাত্রা আছে যেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেখান থেকেই লেখা গুলোর বই আকার দেয়া।

বাংলাদেশে এক সময় নবীন লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদের লেখা প্রকাশের প্রাথমিক স্থান ছিল লিটল ম্যাগাজিন। অনেকেই লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্যিকদের ‘আতুর ঘর’ বলে থাকেন।

বর্তমান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের যুগে ফেসবুক কি সেই স্থানটি নিয়ে ফেলছে?

‘ভিন্নচোখ’ নামে একটা প্রকাশনীর প্রকাশক এস এম নকিব বলছিলেন, ফেসবুক কখনই লিটল ম্যাগাজিনের স্থান নিতে পারবে না।

“যারা বই প্রকাশ করে বা লেখে তাদের আসলে ফেসবুকে ঐধরণের কিছু প্রকাশ করা সম্ভব না। আপনি যেভাবে একটা বই এ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন সেভাবে ফেসবুকে পারবেন না।”

তিনি বলেন, আসলে যারা বই পড়ে তারা বই অবশ্যই কিনবে যারা ম্যাগাজিন পড়ে তারা ম্যাগাজিন অবশ্যই কিনবে।

ফাঁকা পড়ে আছে কেন লিটল ম্যাগাজিন চত্বর?
এবারের বই মেলায় লিটল ম্যাগাজিনের জন্য ১৩০ এর বেশি স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু বই মেলার যখন জমজমাট অবস্থা তখন লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের অনেক স্টলকে দেখা গেছে খালি পরে থাকতে।

‘সময় পূর্বাপর’ নামের পাক্ষিক ম্যাগাজিনের সুরাইয়া জাহান বলছিলেন, অনেকে ফেসবুকটাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আগের মত লিটল ম্যাগের সেই জোয়ারটা নেই।

“আপনি দেখলেই বুঝতে পারবেন এখানে যেমন জমজমাট হওয়ার কথা ছিল তেমনটা নেই। তারপরেও লিটল ম্যাগ বের হচ্ছে, সবাই নিয়ে বসে থাকে কিন্তু বিক্রি খুবই কম,” বলছিলেন মিজ জাহান।

তবে স্টল খালি থাকার পিছনে অন্য আরেকটা কারণকে উল্লেখ করলেন ইফফাত আরা খন্দকার , তিনি ‘অনুপ্রাণন’ প্রকাশনায় কাজ করেন।

“লিটল ম্যাগের বিষয়টা আগে শুধু মননশীলতার বিষয় ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে এটা অনেকটা ব্যবসায়িক হয়ে যাচ্ছে – এটাও একটা কারণ,” তিনি বলেন।

লিটল ম্যাগ বনাম ফেসবুক?
তবে লিটল ম্যাগাজিনের যে গ্রহণযোগ্যতা এত বছর ধরে তৈরি হয়েছে সেই জায়গা কোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিতে পারবে না বলে মনে করছেন লেখক নাহার আহমেদ।

তিনি বলছিলেন, “ফেসবুক দিয়ে সাহিত্য চর্চা কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। লিটল ম্যাগাজিনে সাহিত্য চর্চা এগিয়ে যাবে। এখান থেকে আস্তে আস্তে মানুষ উন্নতির শিখরে উঠে যায়।”

কাজেই লিটল ম্যাগের সাথে কখনো সংঘর্ষ হবে না। ফেসবুকে যারা লেখে তাদেরকে বলা হয় ফেসবুক রাইটার।

“কিছু পরিচিত মানুষ এটার প্রশংসা করলো। আমার কাছে এটার কোন মূল্যায়ন নেই।”

ফেসবুকে লেখালেখি নতুন নয় তবে লিটল ম্যাগাজিনকে বাদ দিয়ে ফেসবুককেই নতুন লেখকরা যে তাদের লেখার প্ল্যাটফরম হিসেবে মনে করছেন এমনটা ভাবছেন না লেখক এবং প্রকাশকরা।

কারণ দিন শেষে সবাই কাগজের মলাটের একটা বই নিজের লেখা দেখতে পছন্দ করেন।