নতুন ফসল না ওঠা পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা মেরামত করে দেওয়া হবে। নতুন ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত বন্যার্তদের সহায়তা দেওয়া হবে।

রোববার দিনাজপুর জিলা স্কুল মাঠে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সকাল ১০টার পর দিরাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানে হেলিকপ্টারে করে তিনি অবতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বন্যা, দুর্যোগ থাকবে। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না এবং না খেয়ে মারা যাবে না। সবাইকে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গে হাহাকার ছিল, মঙ্গা লেগেই থাকতো। আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর করে। উত্তরবঙ্গে যেন মঙ্গা না থাকে আমরা তার ব্যবস্থা করি। ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে উত্তরবঙ্গে আবারও মঙ্গা দেখা দেয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আবারও আমরা সেই মঙ্গা দূর করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে খাদ্য কেনা শুরু করেছি। দেশে পর্যপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। আপনারা চিন্তা করবেন না। আওয়ামী লীগ বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনী সবাই ত্রাণ বিতরণ করছে। জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন আমরাও গৃহহারা মানুষের ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছি।

এসময় তিনি আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমি বাবা, মা, ভাই-বোন সব হারিয়েছি। আমার আর হারাবার কিছু নেই। আমার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। আমি দেশের মানুষের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। প্রয়োজনে আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমিও জীবন দেব।

এনজিওগুলোর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা লোন দিয়েছেন তারা সাপ্তাহিক কিস্তি তোলার জন্য বন্যার্ত মানুষদের জুলুম করবেন না। এটা এনজিওদের প্রতি আমার নির্দেশ থাকবে। ৫০ লাখ পরিবারকে চাল দিচ্ছি। আপনারা যাতে ১০ টাকা কেজি চাল খেতে পারেন তার ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।

এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মনোরঞ্জনশীল গোপাল এমপি, শিবলি সাদিক এমপি, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পুলিশ সুপার মো. হামিদুল আলমসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং রাজারহাট উপজেলার পাঙ্গারানী লক্ষীপ্রিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে রোববার বিকেলে ঢাকায় ফিরবেন তিনি।

উল্লেখ্য, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এ পর্যন্ত দেশের ৩০ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এবারের বন্যায় ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত এক সপ্তাহে কুড়িগ্রামে ১৮ জন, লালমনিরহাটে ৬ জন, সুনামগঞ্জে ২ জন, নেত্রকোনায় ২ জন, নীলফামারীতে ৮ জন, গাইবান্ধায় ৪ জন, সিরাজগঞ্জে ৪ জন, দিনাজপুরে ৩০ জন, জামালপুরে ৯ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ জন, নওগাঁয় ৪ জন, যশোর ৩, শেরপুর ৩, মৌলভীবাজার ২, কুমিল্লা ২, সব মিলিয়ে মোট ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।