নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি গ্রেডিং পদ্ধতিতে

নন-এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলনের তোপে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে পরিবর্তন আনা হচ্ছে এমপিও নীতিমালায়। ইতোমধ্যে নতুন নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এখন মন্ত্রিপরিষদ ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেই এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে, নতুন করে আরও লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্তর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কারণে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন পদ। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ তে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় বলা আছে, ১০০ নম্বরের গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে। একাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর (প্রতি দুই বছরের জন্য পাঁচ নম্বর। ১০ বা তার চেয়ে বেশি বয়স এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ নম্বর)। শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর। এরপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে পাঁচ নম্বর)। পরীক্ষার্থীর সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার ক্ষেত্রে ১৫ ও পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য পাঁচ নম্বর)। পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য ২৫ নম্বরের (কাম্য হার অর্জনে ১৫ নম্বর ও পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ পাসে পাঁচ নম্বর) গ্রেডিং করা হবে। প্রভাষকদের এমপিওভুক্ততিতে বিষয় ভিত্তিক ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান বিভাগের ১৫ জন করা হচ্ছে। তবে নতুন জনবল কাঠামোতে সৃষ্ট পদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেয়া হবে না। কিন্তু নতুন পদে এমপিওভুক্ত করা হবে। নতুন জনবল কাঠামোর বাইরে কর্মরত পদ শূন্য হলে নতুন করে নিয়োগ দেয়া যাবে না। যারা এমপিওভুক্ত নয়, কিন্তু বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নতুন পদে পদায়ন করতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো অনুযায়ী, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে একটি করে পদ রয়েছে। নতুন জনবল কাঠামোতে এ তিনটি পদ ছাড়াও কৃষি, গার্হস্থ্য, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান, ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, চারু ও কারুকলার নতুন পদ সৃষ্টি হবে। কম্পিউটার ল্যাব থাকলে একজন ল্যাব অপারেটর নিয়োগ দেয়া যাবে। এছাড়া অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নৈশ প্রহরী ও আয়াসহ (সহ-শিক্ষা ও বালিকা বিদ্যালয়) ১৯টি পদ প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে রয়েছে ৯টি পদ।

মাধ্যমিক স্কুলে বাংলা, ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের তিনজন শিক্ষকের এমপিওভুক্ত পদ রয়েছে। নতুন করে সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা (বিজ্ঞান বিভাগ চালু থাকলে) বিষয়ে আলাদা দুটি পদসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান, ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা, কৃষি, গার্হস্থ্য, চারু ও কারুকলা, জীব বিজ্ঞান (বিজ্ঞান বিভাগ চালু থাকলে) শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমান সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শারীরিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং চারু ও কারুকলা বিষয় চালু করে। এসব বিষয়ে নতুন পদ সৃষ্টি হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে বিজ্ঞানের একজন শিক্ষকের পদ এমপিওভুক্ত রয়েছে। তিনি একাই পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যা ও উচ্চতর গণিত পড়াতেন। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ভৌতবিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে আলাদা শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন। কৃষি এবং গার্হস্থ্য আলাদা বিশেষায়িত বিষয়। কিন্তু একজন শিক্ষককে দুটি বিষয় পড়াতে হয়। এ দুটি বিষয়ে আলাদা পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। শরীর চর্চা শিক্ষক যারা ছিলেন, তারা শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে গণ্য হবেন। এছাড়া সহকারী গ্রন্থাগার কাম ক্যাটালগার, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটরের নতুন পদ সৃষ্টি হবে। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের প্রতিটি বিষয় ছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে একজন প্রদর্শককে এমপিওভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

উচ্চ মাধ্যমিক কলেজেও একই জনবল কাঠামো থাকবে। আর স্নাতক (পাস) স্তুরে প্রতিটি বিষয়ে একজন করে ল্যাব সহকারী পদের এমপিওভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সবস্তরেই ল্যাব বাধ্যতামূলক। প্রথমবারের মতো উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে উপাধ্যক্ষ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন নীতিমালা অনুমোদন দিলে সারা দেশে ২৬ হাজার ৯০টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আরও সোয়া লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর নতুন করে এমপিওভুক্ত হবেন।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বলেন, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। যারা গ্রেডিংয়ের আওতায় যোগ্য তাদের এ আওতায় আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এমপিওভুক্তিকরণের কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে খসড়া তৈরি করেছি। সেটি যাচাই-বাছাই চলছে। এরপর সেটি অর্থ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন দিলেই এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

নতুন শিক্ষক নিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়ে জাবেদ আহমেদ বলেন, আইসিটিসহ অনেক বিষয় নতুন করে চালু হলেও পদ সৃষ্টি করা হয়নি। শিক্ষক সংকটের করণে এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয় পড়াচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন জনবল কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। শিগগিরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরিতে প্রবেশের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। বয়সের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে।