নতুন সড়ক পরিবহন আইন কতটা ফলপ্রসূ হবে?

আহমেদ শরীফ : সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় গত সাড়ে তিন বছরে সারা দেশে নিহত হয়েছে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। আর প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা! পরিস্থিতি যখন এমন ভয়াবহ, যখন প্রতিদিন রাস্তায় অকালে ঝরে যায় অনেক প্রাণ, তখন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হল সড়ক পরিবহন আইন।

আগে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালককে সর্বোচ্চ ৩ বছরের সাজার বিধান ছিল। নতুন আইনে তা ৫ বছর করা হয়েছে। আর দুর্ঘটনা হত্যাকাণ্ড প্রমাণ হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন এই আইনকে যথেষ্ট মনে করছেন না আন্দোলনকারীরা। যে হারে বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা, তাতে নতুন আইন কতটা ফলপ্রসূ হবে ও এর প্রয়োগ সঠিকভাবে হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ জেগেছে বেশির ভাগ মানুষের মনে।

এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন চালিয়ে আসছে, তা এখন সরকারি হস্তক্ষেপে খেই হারিয়ে ফেলেছে। পুলিশের মারমুখী ভূমিকা, এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের আতঙ্ক সৃষ্টিকারী হামলা ভিন্ন মাত্রা দিচ্ছে চলমান আন্দোলনে। সরকারের অভিযোগ- আন্দোলনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ তাদের সেই দাবিকে সমর্থনও করছে।

প্রশ্ন হল- শিক্ষার্থীরা কি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আন্দোলন করার অধিকার রাখে না? তাদের দমন করতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে- এ অভিযোগ এখন জোরালো হয়ে উঠেছে।

শিক্ষার্থীরা টানা এক সপ্তাহ নির্বিঘ্নে সড়ক অবরোধ, গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা, গাড়ি লাইনে রেখে চলার বিষয়গুলো তদারকি করেছে। কথা হল, ট্রাফিক কন্ট্রোল করা তো শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এর জন্য ট্রাফিক পুলিশ আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে।

দুঃখের বিষয় হল, দিনের পর দিন ট্রাফিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা বাধ্য করেছে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে। রাজধানী ঢাকায় প্রায়ই কোনো না কোনো স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নিহতের ঘটনা ঘটছে। দিন দিন বেড়ে চলেছে এই পরিসংখ্যান।

তাই ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন আর রাস্তায় না নামতে পারে, ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টরা যেন কোনো দুর্নীতি করতে না পারে, অদক্ষ ও কম বয়সী চালকরা যেন যানবাহন চালাতে না পারে- তা কঠোরভাবে মনিটর করা উচিত সরকারের। এতে হয়তো রাস্তায় প্রাণ হারানোর ঘটনা অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব হবে।

লেখক ও সাংবাদিক, ঢাকা