নামের শেষে দেশি-বিদেশী ডিগ্রী থাকলেই কি তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক?

ডাঃ মানজুর আহমাদ (নূরী); ডি.এম.টি (ঢাকা), ডি.এস.এস.এম.সি (মালয়েশিয়া), ডি.এস.এস.এম (ভারত)। তিনি বাংলাদেশ লোকাল মেডিকেল ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং আরগন ফার্মাসিউটিক্যালস এর মেডিকেল অফিসার। নামের পরের এসব ডিগ্রী ও তথ্য চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন আর সাইনবোর্ড থেকে পাওয়া। নামের শেষে দেশি-বিদেশী এসব ডিগ্রী দেখে সাধারণ মানুষ তাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু আসলেই কি তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক?

ডাঃ মানজুর আহমাদ (নূরী) নামের শেষে উল্লেখিত ডিগ্রী দেখিয়ে দীর্ঘদিন ডাক্তারী পেশায় নিয়োজিত আছেন। আসলে বাংলাদেশে কতটা বৈধতা আছে তার ডিপ্লোমা সদনের। সেটির এক অনুসন্ধানে নেমেছিল আওয়ার নিউজ বিডি’র এই প্রতিবেদক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডাঃ মানজুর আহমাদ (নূরী) চারটি চেম্বারে রোগী দেখেন। সেগুলো হচ্ছে- (১) সাভার চৌরাস্তা মোড়ের দেওয়ান মেডিকেল হল, (২) বাড্ডা থানাধীন বিসমিল্লাহ মেডিকেল হল, (৩) ভাটারা থানাধীন কুড়িল কাজী বাড়ী জামে মসজিদ রোড়ের মারিয়া ফার্মেসী, (৪) গাজীপুরের কালিয়াকৈরের তিব্বে রোহানী মেডিকেল সেন্টার। এসব চেম্বারে সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে তিনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

চেম্বারের দেয়ালে লাগানো সাইনবোর্ড ও প্রেসক্রিপশন থেকে জানা যায়, তিনি বিনা অপারেশনে অর্শ, গেজ, পাইলস্, ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, এ্যাজমা-হাঁপানী, গ্যাস্ট্রিক, আলসার রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। শুধু তাই নয়; তিনি যাবতীয় জটিল ও কঠিন রোগ সহ নাকের মাংস বৃদ্ধি (পলিপ) ইনজেকশন ও রাবার ব্যান্ড লাইগেশন পদ্ধতিতেও চিকিৎসা করেন। যৌন ও চর্ম রোগীদের জন্যও রয়েছে বিশেষ চিকিৎসা।

বাড্ডা থানাধীন বিসমিল্লাহ মেডিকেল হল চেম্বারে ডাঃ মানজুর আহমাদ (নূরী)র কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়া কয়েকজন রোগীর সাথে কথা হয় আমাদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, ডাঃ মানজুর আহমাদ (নূরী) ৫০ টাকা ভিজিট ফি নিয়ে প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন। একেবারে দেড়/দুই থেকে ৪/৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকেন। তবে উনার কাছ থেকে চিকিৎসার সুফল না পাওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে অনেকের।

নামের আগে ডাক্তার ও পরে বিভিন্ন ডিগ্রী লেখার ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম ডাঃ মানজুর আহমাদ (নূরী)র কাছে। তিনি জানিয়েছেন, আমি ঢাকার ডি.এম.টি; মালয়েশিয়ার ডি.এস.এস.এম.সি এবং ভারতের ডি.এস.এস.এম থেকে ডিপ্লোমা করেছি। সেখান থেকে যে সার্টিফিকেট পেয়েছি সেটার ভিত্তিতে ডাক্তার ও ডিগ্রী সমূহ ব্যবহার করি।

এদিকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমঅ্যান্ডডিসি) এর আইনের ধারা ঘাটাঘাটি করলে চোখে পড়বে ভিন্ন চিত্র। সেখানে আইনের ২৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। করলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। এই অপরাধ অব্যাহত রাখলে প্রতিবার পুনরাবৃত্তির জন্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।’

ডাঃ মানজুর আহমাদ (নূরী) বিএমঅ্যান্ডডিসি’র ধারায় উল্লেখিত এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী নন, তারপরও তিনি নামের আগে সর্বত্র ডাক্তার লিখে একাধিক স্থানে চেম্বার বসিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা।

এদিকে বিএমঅ্যান্ডডিসি আইনের ২২(১) ধারায় আরো বলা হয়েছে, ‘অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত কোনো মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করিতে অথবা নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলিয়া পরিচয় প্রদান করিতে পারিবেন না।’ ২২(২) ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে তিন বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

ডাঃ নূরীর প্রেসক্রিপশন থেকে জানা যায় তিনি আবার আরগন ফার্মাসিউটিক্যালসের নিয়োগপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মোঃ রোকনুজ্জামানের কাছে। তিনি আওয়ার নিউজ বিডিকে জানিয়েছেন, ডাঃ মানজুর আহমাদ (নূরী)কে আমরা মেডিকেল অফিসার নয়, এ্যাসিস্টেন্ট মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। বাড্ডাতে উনার নিজের একটি ওষুধের দোকান আছে। উনি শুধু সেখানেই বসতে পারবেন, এছাড়া যদি অন্য কোথায় তিনি চেম্বার খুলে বসেন তাহলে সেটার দায়ভার কোনো প্রতিষ্ঠান বহন করবে না।

এদিকে বিষয়টি ডিপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ জাকির হোসেন খানকে অবহিত করলে তিনি জানান, বিএমঅ্যান্ডডিসি রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া কোনো ব্যক্তি নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন না। আর কেউ যদি এটা করেন সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।