নারী হয়েও কীভাবে সফলতা ছিনিয়ে নিতে হয় তার জ্বলন্ত প্রমাণ হ্যাপি দাশ

স্বামী অজিত দাশ দীর্ঘ ৩০ বছর ওমানে বসবাস করছিলেন। ব্যবসা বাণিজ্যে করে বেশ সচ্ছল ভাবেই পরিবারটি চলে আসছিলো, যেহেতু স্বামী অজিত দাশ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং বেশ ভালোই আয় রোজগার করতেন, তাই স্ত্রী হ্যাপি দাশের কোনো চিন্তাই ছিলো না পরিবার-পরিজন নিয়ে। শুধুমাত্র রান্নাবান্না ছাড়া আর কিছুই তিনি পারতেন না, এমনকি কীভাবে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে হয় এই দক্ষতাও ছিলো না তার। কিন্তু কে জানতো এই হ্যাপি দাসকেই এক সময় সংসারের ভার নিতে হবে।

২০০৯ সালে ওমান ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ “গনুর” মুখোমুখি হয়, তাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়, স্বামী হারান স্ত্রী হ্যাপি দাশ। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে যেন আকাশ ভেঙে পরেছিল হ্যাপি দাশের উপর। কী করবেন কোথায় যাবেন কিছুরই ঠিক ছিলো না তার। ওই সময় বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব থেকে শুরু করে কমিউনিটির সকল সিনিয়রই এসেছিলেন তাকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে, কিন্তু হ্যাপি দাশ কারো থেকেই কোনো সহযোগিতা নেননি, তিনি শুধু মাত্র একটি কাজ চেয়েছিলেন সবার কাছে। তার একটাই উদ্দেশ্য ছিলো “কারো উপর বোঝা না হয়ে নিজেই কিছু করে দেখাবে” আর এই জন্যই তিনি ওমানের সকল সিনিয়র বাংলাদেশিদের নিকট শুধুমাত্র একটি চাকরির জন্য ঘুরেছিলেন।

স্বামী হারানোর পর ভেঙে না পরে নিজেই নেমে পরেন জীবন যুদ্ধে, শুরুতে ২০১০ এ বাংলাদেশ স্কুলে চাকরি করেন দুই বছর, চাকরির পাশাপাশি ওমানের একটি চ্যারিটেবল সংস্থা “দার আল আত্তার” মাধ্যমে ১ বছর ফ্যাশন ডিজাইনিং এর প্রশিক্ষণ নিয়ে নেমে পরেন ব্যবসায়, এভাবে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, বর্তমানে তিনি দুই ছেলে নিয়ে বেশ সচ্ছলভাবেই সংসার চালাচ্ছেন।

বড় ছেলে বিবিএ শেষ করে পার্টটাইম চাকরি করছেন ওমানে এবং ছোট ছেলে মালয়েশিয়াতে পড়ালেখা করছেন। একজন নারী হয়ে বিদেশের মাটিতে জুন জুলাইয়ের উত্তপ্ত ৫২ ডিগ্রি গরমের ভেতরও তিনি বিভিন্ন মেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে নারীদের বিভিন্ন ড্রেস বিক্রি করেন। আর তাইতো আজ ওমানের আট লাখ বাংলাদেশির পরিচিত তিনি। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সবাই তাকে সম্মান করে।

সফল হতে চাইলে কী করতে হবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখতে হবে, কঠিন পরিশ্রম করতে হবে, সৎ হিতে হবে এবং সাহসী হতে হবে।