নায়ক জাফর ইকবালের যে ইচ্ছে পূর্ণ হয়নি

বাংলা চলচ্চিত্রের স্টাইলিশ নায়কদের মধ্যে অন্যতম স্টাইলিশ তেমন অভিমানী, আবেগপ্রবণ। ছিলেন বোহেমিয়ান। বলছি চিরসবুজ নায়ক জাফর ইকবালের কথা। শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তাঁর সহজ বিচরণ। অভিনয়ের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে চমৎকার গান গাইতে পারা এ অভিনেতা বেশকিছু ছবিতে গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে জন্ম জাফর ইকবালের। বাড়িতে গানবাজনার রেওয়াজ ছিল। তাঁর বোন শাহানাজ রহমতুল্লাহ একজন সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী। বড় ভাই আনোয়ার পারভেজও নামকরা শিল্পী। জাফর ইকবাল প্রথমে গায়ক হিসেবেই পরিচিতি পান। ছিল নিজের ব্যান্ডদল। ১৯৬৬ সালে তিনি নিজের একটি ব্যান্ড গড়ে তোলেন।

১৯৮৪ সালে আনোয়ার পারভেজের সুরে রাজ্জাক অভিনীত বদনাম ছবিতে ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ তাঁর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম। মূলত তিনি ছিলেন গিটারবাদক। ভালো গিটার বাজাতেন বলে সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাঁকে দিয়ে অনেক ছবির আবহসংগীত তৈরি করিয়েছেন। তার সেই ছবিগুলোও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগে জাফর ইকবাল চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। তার অভিনীত প্রথম ছবির নাম ‘আপন পর’। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন কবরী। জাফর ইকবালের সাথে অভিনেত্রী ববিতা জুটি হয়ে প্রায় ৩০টির মতো ছবি করেন। সবমিলিয়ে তিনি প্রায় ১৫০টি ছবি করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন জাফর ইকবাল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। ‘সূর্যসংগ্রাম’ ও এর সিকুয়েল ‘সূর্যস্বাধীন’ চলচ্চিত্রে ববিতার বিপরীতে অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় তাঁকে সে প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের রাগী, রোমান্টিক, জীবন-যন্ত্রণায় পীড়িত কিংবা হতাশা থেকে বিপথগামী তরুণের চরিত্রে তিনি ছিলেন পরিচালকদের অন্যতম পছন্দ। সামাজিক প্রেমকাহিনী ‘মাস্তান’ এর নায়ক জাফর ইকবাল রোমান্টিক নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রে এক গ্রামীণ তরুণের চরিত্রেও দর্শক তাকে গ্রহণ করে।

১৯৮৯ সালে জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি ‘অবুঝ হৃদয়’ দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ ছবিতে চম্পা ও ববিতার বিপরীতে তাঁর অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ববিতার সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল দর্শকনন্দিত। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় হতাশ হয়েই জাফর ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছিল। প্রয়াত জাফর ইকবাল আড্ডার ছলে প্রায়ই ববিতাকে বলতেন, ‘আমার ইচ্ছে আছে শাবনাজের বিপরীতে অভিনয় করব’। জাফর ইকবালের সে ইচ্ছে অবশ্য পূর্ণ হয়নি।

ববিতার বিপরীতে ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। জাফর ইকবাল অভিনীত ‘ভাই বন্ধু’, ‘চোরের বউ’, ‘অবদান’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘একই অঙ্গে এত রূপ’, ‘ফকির মজনুশাহ’, ‘দিনের পর দিন’, ‘বেদ্বীন’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘবিজলী বাদল’, ‘সাত রাজার ধন’, ‘আশীর্বাদ’, ‘অপমান’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘নয়নের আলো’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘প্রেমিক’, ‘নবাব’, ‘প্রতিরোধ’, ‘ফুলের মালা’, ‘সিআইডি’, ‘মর্যাদা’, ‘সন্ধি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র সুপারহিট হয়।

জাফর ইকবাল ছিলেন আবেগপ্রবণ এবং দারুণ অভিমানী। জাফর ইকবালের ক্যারিয়ার আকাশচুম্বী তখন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। ১৯৯১ সালে ২৭ এপ্রিল মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন জাফর ইকবাল।