নির্বাচনকালীন সরকারের যে ফর্মুলা দিলেন বি. চৌধুরী

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপে বসেছে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৪ মিনিটে গণভবনে এই সংলাপ শুরু হয়।

সংলাপে ১৪ দলীয় জোটের ২৩ সদস্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিপরীতে যুক্তফ্রন্টের ২১ সদস্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জোট নেতা ও বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যুক্তফ্রন্টের পক্ষে দাবি ও একগুচ্ছ পরামর্শ তুলে ধরেন বি. চৌধুরী।

নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা জোট থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দিয়ে একটি সন্তোষজনক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচনে সকল প্রকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার অথবা বর্তমান সরকারের নির্বাচন বিষয় সংক্রান্ত ক্ষমতা সীমিত করা যেতে পারে।

যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার গঠনেরও প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে এক দিনের জন্য হলেও সংসদ ডেকে জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তি এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান ব্যাখ্যা করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে ৭টি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো—

১. নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। সম্ভব না হলে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। এজন্য নিম্ন লিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হবে— ক) নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কর্মচারীদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে। খ) নির্বাচন কমিশন ১০০% রাষ্ট্রপতির অধীনস্থ করতে হবে। গ) তফসিল ঘোষণার পর এমপিরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো প্রকল্প উদ্বোধন/প্রতিশ্রুতি যাতে না দিতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনীয় আইন করে মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে।

২. সরকারি দলের প্রার্থীদের বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার অপসারণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. নির্বাচনকালীন সরকার চাই। জাতীয় সরকার গঠন: প্রয়োজনে এক দিনের জন্য সংসদ ডেকে জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। অথবা মন্ত্রিপরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা জোট থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় প্রদান করেও একটি সন্তোষজনক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচনে সকল প্রকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার অথবা বর্তমান সরকারের নির্বাচন বিষয়ে সম্পূর্ণ ক্ষমতা সীমিত করা।

৪. আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আমাদের জন্য গর্বের। তারা বিভিন্ন দেশে নির্বাচনকালীন সহিংসতা রোধ ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ সুনামের সঙ্গে করে আসছে। সুতরাং নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে শান্তিশৃঙ্খলার বিঘ্ন না ঘটে, সেহেতু আমাদের প্রস্তাব— ক) আমাদের প্রিয় সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এবং নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর পর্যন্ত মোতায়েন করতে হবে। খ) নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনীকে সীমিত ক্ষমতা দিতে হবে যেমন: আটক রাখার ক্ষমতা ও তাদের ভোট কেন্দ্রে থাকতে দিতে হবে, যাতে করে ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় এবং ভোটাররাণ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।

৫. ইভিএম: আধুনিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক নির্বাচনে আমাদের অনেক আগ্রহ আছে। কিন্তু, ইভিএম সম্পর্কিত যে সকল প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন, তা আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথেষ্ট নেই। সেজন্য আমরা এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সঠিক হবে না বলে মনে করি।

৬. নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।

৭. নির্বাচন সম্পর্কিত মামলা নির্বাচনের পর এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন শিগগিরই প্রণয়ন করতে হবে।