নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের যে রূপরেখা

বাংলাদেশে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবার সরকারের সাথে সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাসহ তাদের মূল দাবিগুলোর সমর্থনে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে।

ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গতকাল বুধবার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতাদের সাথে দ্বিতীয় দফা সংলাপ করেছেন।

দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবি করে আসছে।

কিন্তু এই প্রথম বিএনপি তাদের নতুন জোটের পক্ষ থেকে সংলাপে গিয়ে সেই সরকার ব্যবস্থার একটা প্রস্তাব বা রূপরেখা তুলে ধরলো।

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে কী বলা হয়েছে?

রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক’ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।

এরপর রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার সাথে পরামর্শ করে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি কোন রাজনৈতিক দল বা কোন দলের অঙ্গ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। এছাড়া তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না।

এমন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন বলে ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

বাকি ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে একই শর্ত দেয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। আর ১০ জন উপদেষ্টা একইভাবে মন্ত্রীর পদমর্যাদা নিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনকালীন এই সরকার সংসদ ভেঙে দেয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে।

তবে বাতিল হওয়া তত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো একই রকম ছিল।

পুরোনো সেই ব্যবস্থার আদলেই বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট এই প্রস্তাব দেয়।

সংসদ ভেঙে দেয়ার ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্টের যে প্রস্তাব

এই প্রস্তাবে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ এর ‘খ’ উপধারা উল্লেখ করে সংসদ ভেঙে দেয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সাংবিধানিক এই বিধান ও প্রথার আলোকে প্রধানমন্ত্রী নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতিকে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সংবিধানসম্মত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন চেয়েছে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে

তাদের লিখিত প্রস্তাবে সংসদ ভেঙে দেয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার যে কথা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী তারা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চে নির্বাচন চেয়েছে।

এই সময়ে নির্বাচন দেয়ার ব্যাপারে যুক্তি হিসেবে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৪৫ দিন ব্যবধান থাকা বাঞ্ছনীয়।

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রস্তাব

ঐক্যফ্রন্ট তাদের প্রস্তাবে বলেছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অন্তত আংশিক পুনর্গঠন অত্যাবশ্যক।

সেখানে ঐক্যফ্রন্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চেয়েছে।

তারা বলেছে, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ৬ ধারা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র দিয়ে সরে যেতে পারেন। রাষ্ট্রপতি দলগুলোর সাথে আলোচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে পারেন।

সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনে নতুন সচিব নিয়োগ করা প্রয়োজন বলেও তারা দাবি করেছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের অবিলম্বে অন্ততঃ জামিনে মুক্তি চেয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।

আর সেজন্য এটর্নি জেনারেল, পিপি বা সরকারি আইনজীবীরা জামিনের বিরোধীতা করবে না, এমন নিশ্চয়তা তারা চেয়েছে।

ঐক্যফ্রন্ট বলেছে, সংসদ ভেঙে দেয়ার পর কম্পিউটার সিস্টেম অনুপ্রবেশ বা হ্যাকিং এর অপরাধ ছাড়া বাক বা মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন মামলা করা যাবে না।

সভা সমাবেশের নিশ্চয়তা

এখন থেকে নির্বাচনের ৪৮ ঘন্টা আগ পর্যন্ত সব দল এবং প্রার্থীদের সভা সমাবেশ এবং সংগঠনের স্বাধীনতা প্রয়োগের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি তারা করেছে।

বাক স্বাধীনতা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা তারা বলেছে।

বিশেষভাবে চিঠিপত্র, টেলিফোন এবং মোবাইল ফোনের কথাবার্তা ফাস করা সাংবিধানিক নয় বলে ঐক্যফ্রন্ট উল্লেখ করেছে। তারা এ ধরণের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে।

ঐক্যফ্রন্ট ইভিএম ব্যবহারের বিরোধীতা করেছে।

তারা নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করেছে।

-বিবিসি বাংলা