নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে দেড় হাজার কোটি টাকা চায় ইসি

একাদশ জাতীয় সংসদ, পাঁচ সিটি করপোরেশনসহ অনান্য স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছে জাতীয় বাজেটে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। চলতি বছর শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তার আগে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে হবে দেশজুড়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬শ’ কোটি টাকা। এ ছাড়া আসন্ন চার সিটি নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনের পরপরই অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য আরো ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আরো তিনশ’ কোটি টাকার প্রয়োজনের কথা জানিয়েছে ইসি। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন।

এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিশাল অর্থের প্রয়োজন। এ কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আগে থেকে বলে রাখতে হয়। এতে প্রস্তাবিত বাজেটের কথাও তুলে ধরা হয়। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হুদার বৈঠকে সংসদ, উপজেলা, সিটি ও অনান্য নির্বাচনে আনুষঙ্গিক বিষয়ে বাজেটের প্রস্তাবিত বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। এক্ষেত্রে দেড় হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ চেয়ে আলোচনা হয়েছে।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির জন্য একুনে ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫শ’ কোটি টাকা। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একই রকম বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে উপকরণের দাম বাড়ায় এবার ৬শ’ কোটির মতো ব্যয় ধরা হচ্ছে।

সংবিধান অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তার আগে বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আগামী বছরের মার্চে শুরু হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।

‘সংসদ ও উপজেলার জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। এর সঙ্গে আরো প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের বরাদ্দ রাখা হবে। একই বৈঠকে এনআইডি উইংয়ের একটি প্রকল্পের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

এবার ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখের মতো। এতে ৪০ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ জনবল দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারে।

দশম সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। আর র‌্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা ছিলেন টহলে।

ওই নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়, ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় ভোটের সময় সশস্ত্র বাহিনীর অর্ধ লক্ষ সদস্যের সঙ্গে ছিলেন অন্তত ৮০ হাজার পুলিশ, আট হাজার র‌্যাব, ১৬ হাজার বিজিবি ও প্রায় সোয়া ২ লাখ আনসার সদস্য। নির্বাচন আয়োজনে ব্যয় হয় প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৮৩ কোটি টাকাই আইনশৃঙ্খলা খাতে খরচ হয়।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে ভোট করতে হলে খরচও সে অনুযায়ী দ্বিগুণ হবে। এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে ব্যয় হয়েছিল ১৬৫ কোটি টাকার বেশি।