নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন এবং এর আগে-পরে সহিংসতা ও মানবাধিকার লংঘন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। এসব ঘটনায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি, পাশাপাশি ভবিষ্যতে প্রতিহিংসামূলক এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামসাদানি শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে জাতিসংঘ মহাসচিবের ডেপুটি স্পোকসম্যান ফারহান হকও নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একই আহ্বান জানান।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, শুধু ভোটগ্রহণের দিনই প্রাণহানি এবং বেশ কিছু মানুষের আহত হওয়ার বিশ্বাসযোগ্য খবর পাওয়া গেছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হল, রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড চলছে। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে শারীরিকভাবে হামলা ও নির্যাতন, বাছবিচারহীনভাবে গ্রেফতার, গুম ও ফৌজদারি মামলা দায়ের ইত্যাদি।

আরও বলা হয়, বিভিন্ন খবরে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সহিংস আক্রমণ করছেন এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আরও বলা হয়, গণমাধ্যম পেশাজীবীদের ভয়ভীতি দেখানো, তাদের আহত করা, সম্পদের ক্ষতিসাধন ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মতো অস্বস্তিকর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া এমন প্রবণতাও দেখা গেছে, যাতে নির্বাচন নিয়ে অবাধে ও প্রকাশ্যে প্রতিবেদন করা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে কমপক্ষে ৫৪টি নিউজ পোর্টাল ও অন্য ওয়েবসাইট বন্ধ এবং ভোটগ্রহণের দিন ঘিরে ইন্টারনেট সেবায় অস্থায়ী বিধিনিষেধ আরোপ করার ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করেন এবং সব ব্যক্তি ও সংগঠন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যকার আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্র সীমিত হচ্ছে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে সম্প্রতি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পুলিশের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার, আবারও গ্রেফতার করার ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইনের অধীন মামলা করার খবরও এসেছে। এ আইনসহ স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে এমন আইনের সংস্কার করা উচিত; যাতে মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ও আপামর জনসাধারণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করা, নির্বাচন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের অবাধে বিতর্ক করার অধিকার সুরক্ষিত হয়। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ‘আমরা নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সহিংসতা ও মানবাধিকার লংঘনের সব অভিযোগ দ্রুত, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকরভাবে তদন্ত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের কারও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না দেখে বিচারের আওতায় আনারও আহ্বান জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে আরও প্রত্যাঘাতমূলক ঘটনা প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কঠোরভাবে আইনের শাসন, বৈধতার নীতি ও সামঞ্জস্য মেনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতা প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি নিরপেক্ষ ও সক্রিয় ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’