নির্বাচনের আগে এমপিওভুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই

আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ইতিমধ্যে আবেদন করা সাড়ে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিতে প্রয়োজন অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখনও এ অর্থের সংস্থান হয়নি।

এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিলে বাকিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঝুঁকি নেয়ার বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও দ্বিমত আছে। এমন পরিস্থিতিতে এমপিওভুক্তির কাজের গতি কৌশলে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিদর্শন ও ফিটলিস্ট তৈরির নামে সময়ক্ষেপণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অবশ্য বলেছেন, এবার নতুন প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। পরবর্তীকালে বাস্তবচিত্র সরেজমিন যাচাই-বাছাই চলবে। এরপর এমপিওভুক্ত করা হবে।

নতুন এমপিওভুক্তির কাজে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন এমপিওভুক্তি না হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত ৬ মাস লেগে যেতে পারে। এর মধ্যে নির্বাচন শেষ হয়ে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পর এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসতে পারে।

ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, পরে যাতে নতুন এমপিওভুক্তির কাজ দ্রুত শেষ করা যায়, সে লক্ষ্যে তারা কাজ এগিয়ে রাখছেন। এর অংশ হিসেবে আবেদনকারী ৯ হাজার ৪৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শর্তপূরণ করা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার তালিকা ধরে সরেজমিন যাচাই শুরু হবে। স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটিকে ওই কাজ দেয়া হবে। কমিটি কমপক্ষে তিনটি দিক দেখবে- বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে কিনা এবং প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত। এছাড়া পাসের হার, প্রতিষ্ঠানের বয়সসহ অন্যান্য দিক দেখা হবে। এক কথায় আবেদনে দেয়া তথ্য সঠিক কিনা এবং তা নতুন এমপিওর শর্তপূরণ করে কিনা, তা নিরীক্ষা হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত তালিকা করবে।

মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়োগ করা হয় শিক্ষকদের মধ্য থেকে। অপরদিকে আবেদনকারী সাড়ে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বড়জোর ২ হাজার প্রতিষ্ঠান শর্তপূরণ করে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজ প্রায় ১২শ’, মাদ্রাসা ৫শ’ এবং সাড়ে ৩শ’ কারিগরি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো এমপিও পাওয়ার উপযোগী নয়। এমন পরিস্থিতিতে এমপিও দেয়া হলে বঞ্চিতদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা একদিকে যেমন নির্বাচনী কাজে প্রভাব ফেলতে পারে, অপরদিকে নির্বাচনের আগে শিক্ষকদের রাজপথে ঠেলে দিতে পারে। তাই নির্বাচনের আগে এমপিও না দেয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েকদিন আগে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন সচিবের আলাপ হয়েছে। এমপিওভুক্তির মতো বিষয় সরাসরি ঘোষণা দিয়ে স্থগিত করলে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। এ পরিস্থিতিতে যাচাই-বাছাইয়ের নামে এমপিওভুক্তির কাজে সময়ক্ষেপণের কৌশল অবলম্বনের সিদ্ধান্ত হয়।

অন্যদিকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, টাকা এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন নয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে অর্থের সংস্থান হয়ে যাবে। কেননা, এ বছরের বাজেটে নতুন এমপিওভুক্তি খাতে প্রথমে ৩২ কোটির মতো টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। পরে আরও কিছু টাকা এসেছে। সেগুলো মিলে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা আছে। কিন্তু একবার কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে আজীবন তার ব্যয় বহন করতে হয়। ৫শ’ কোটি টাকায় হয়তো ৭-৮শ’ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যাবে। কিন্তু আগামী অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ বরাদ্দের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত এমপিও দেয়ার সিদ্ধান্ত হবে না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, এমপিও দেয়া হবে না এমন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে আমরা আবেদন নিয়েছি। সেগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে।

উল্লেখ্য, আবেদনকারী সাড়ে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিলে বছরে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এমপিও বিতরণকারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন তিন অধিদফতরের হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৮ হাজার। এ খাতে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ বছরে ১৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা, যা বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটের ৬৩ শতাংশের বেশি।-সৌজন্যে : যুগান্তর।