নির্বাচনের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি অনিশ্চিত

সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চলতি বছর হাজারখানেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার লক্ষ্য ছিল সরকারের। কিন্তু এমপিওভুক্তির জন্য ৯ হাজার ৫৯৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হাজারখানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে অন্যরা অস্তুষ্ট হতে পারে, এই বিবেচনায় পুরো প্রক্রিয়াটিই ধীরগতিতে চলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দুজন কর্মকর্তা বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার সম্ভাবনা খুবই কম। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, সরকার এখন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না, যাতে শিক্ষকদের একটি অংশের মধ্যে অসন্তোষ বা বঞ্চনার মনোভাব তৈরি হয়।

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ (মূল বেতন ও কিছু ভাতা) পান। আর যেগুলো এমপিওভুক্ত নয়, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। এ জন্য বেসরকারি স্কুল-কলেজ পর্যায়ে এমপিওভুক্তির বিষয়টি অন্যতম আলোচিত বিষয়।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলো এখন যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়েও যাচাই-বাছাই করা হবে। যাচাই-বাছাই হলে এমপিওভুক্ত করা হবে। তবে কবে এমপিওভুক্তি করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি শিক্ষামন্ত্রী।

বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাঁদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় ১ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সাড়ে ৫ হাজারের মতো। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরেও কয়েক হাজার নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।

সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর থেকেই এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনসহ কঠোর আন্দোলনে নামলে সরকার চলতি অর্থবছর থেকেই এমপিওভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু গত জুন মাসে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেননি। এরপর শিক্ষকেরা আবারও আন্দোলনে নামেন। তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এমপিওভুক্তির বিষয়ে কাজ চলছে। এরপর গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারি করে। এরপর গত আগস্টে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন জমা নেওয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নীতিমালার বাইরে যেনতেন প্রতিষ্ঠান যেন এমপিওভুক্ত হতে না পারে, সে জন্য মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই জরুরি। কিন্তু মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের কাজটি এখনো শুরুই হয়নি। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে এত অল্প সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাঠপর্যায়ে গিয়ে যাচাই-বাছাই করা কঠিন হবে।

সরকারের মেয়াদের শেষ হতে চললেও এখনো এমপিওভুক্তির ঘোষণা না আসায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম জাতীয় নির্বাচনের আগেই ভালো কিছু হবে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাচ্ছি না। এ কারণে আমরা হতাশ। তারপরও আশা করব, মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রী এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করবেন।’প্রতিবেদন প্রথম আলো’র সৌজন্যে প্রকাশিত।-প্রতিবেদন প্রথম আলো’র সৌজন্যে প্রকাশিত।