নির্বাচনের রাজনীতি নষ্ট করেছে জিয়া : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশের নির্যাতিত নিপীড়িত বাঙালির মনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছিলেন। পাকিস্তানের শাসকরা যেভাবে চলতে বলতো সেভাবেই চলতো। অধিকারের কথা তারা ভুলেই গিয়েছিল। অত্যাচার-নির্যাতনকে তারা মনে করতো এটাই আল্লাহর বিধান। সেই দেশের মানুষকে সশস্ত্রযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার মতো সাহস সৃষ্টি করেছেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও সাদেক খান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অজপাড়াগাঁয়ের সেই ছোট্ট শিশুটির নাম এখন বিশ্বেজুড়ে সমাদৃত। তিনি একটি জাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। যে বাংলাদেশের মানুষ একবেলা খাদ্য জোগাড় করতে পারতো না। উল্টো নির্যাতিত হতো। এ নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগও ছিল না। তাদের মনে ছিল এটাই বোধহয় আল্লাহর বিধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনেও তার অনেক অবদান। কিন্তু এটা অনেকেই স্বীকার করেননি। ৪৮ (১৯৪৮) সালে ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়েই বারবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি, জেলে গেছেন। ৪৯ সালে গ্রেফতার হন। বায়ান্ন সালে গুলি চললো, ভাষাশহীদরা প্রাণ দিলেন। অনেকেই এ আন্দোলনকে সেখানেই থামিয়ে দেয়। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে জাতির পিতা সেই আন্দোলন আবারও চালাতে থাকেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আন্দোলন চালিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস থেকে এইসব তথ্য মুছে গিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা ওই সময় তার (বঙ্গবন্ধু) বিরুদ্ধে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছিল- ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর সেগুলো সংগ্রহ করি। সেখান থেকেই এসব জেনেছি। আমরা সেসব রিপোর্ট থেকে এরই মধ্যে প্রকাশ করতে শুরু করেছি।

এদিকে বাংলাদেশের ‘নির্বাচনের রাজনীতি’ ধ্বংসের জন্য সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জিযাউর রহমান এদেশের ভোটের রাজনীতিটাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করল। তার হ্যাঁ-না ভোট, তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন… সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে সেই অবস্থায় নির্বাচন করার অর্থ হলো একদিকে সেনাআইন ভঙ্গ করা, সেনাবাহিনীর রুলস রেগুলেশন ভঙ্গ করা, অপরদিকে সংবিধান লঙ্ঘন করা। এই যে একটা অনিয়মের যাত্রা শুরু, এই প্রক্রিয়াই চলতে থাকল বাংলাদেশে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিলেন সেনাকর্মকর্তা জিয়া। পরে তিনি রাষ্ট্রমতা দখল করেন, গড়ে তোলেন বিএনপি নামে দলটি। সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ই তার রাজনৈতিক দলে দায়িত্ব নেয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসব সমালোচনার পাল্টায় বিএনপি নেতারা দাবি করে আসছেন, জিয়াই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিছু লোক খুব বাহবা দিল জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে। এটা যদি সত্যিই বহুদলীয় গণতন্ত্র হয় তাহলে ক্ষমতায় বসে থেকে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সে যে একটি দল গঠন করল এবং সে দলও একবার ১৯ দফা কর্মসূচি… এরপর আসল কী? জাগো দল… এরপর আসলো কী কী সব তারপর আসলো বিএনপি। এই ৩/৪ ধাপ পার করে একটা দল করল আর সেই দল সৃষ্টির সাথে সাথে যারা ক্ষমতায় বসে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সৃষ্ট করা দল..যারা হাঁটতে শিখলো না, চলতেও শিখলো না, কারও কাছে যেতেও শিখলো না, তারা টু থার্ড মেজরিটি পেয়ে গেল!

তিনি বলেন, এই মেজরিটি পাওয়ার পেছনে রহস্যটা হলো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান চেয়েছিল, যে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছে, কাজেই সংবিধান সংশোধন করে তার অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার একটা পদ্ধতি পাওয়ার জন্যই টু থার্ড মেজরিটি দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই এই অবৈধ ক্ষমতা বৈধকরণের আকাঙ্ক্ষায় এই যে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ধ্বংস করা, জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার যাত্রা শুরু। কিছু লোককে উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে অর্থশালী, সম্পদশালী করা, একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করা এবং আজকে যে ব্যাংকের টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়া, ঋণখেলাপি, ঘুষ-দুর্নীতি, মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি যা যা সৃষ্টি হয়েছিল সবই সেখান থেকে আসল। এই পদ্ধতি একের পর এক চলতে থাকল সেই ৯৬ সাল পর্যন্ত।

তিনি বলেন, জিয়ার পথ ধরে এরশাদ ক্ষমতায় এসেছে, আবার খালেদা জিয়ার ক্ষমতা দখলটাও ওই একই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে ছিল। ক্যান্টনমেন্ট বসেই সে ক্ষমতাটা দখল করেছিল। জনগণ তাদের ভোট দিয়ে যেভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন সেই সুযোগটা তখনও আসেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা জাতির পিতার জন্মদিন পালন করছি। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল এই সময়টাকে আমরা ঘোষণা দিয়েছি মুজিববর্ষ হিসেবে। আমরা জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করব। কমিটি করেছি, আমি চাই, সারা বাংলাদেশ ইউনিয়ন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা এলাকায় এখন থেকে সকলকে প্রস্ততি নিতে হবে জাতির পিতার জন্মদিন থেকেই শুরু হবে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে।