নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাচ্ছে না ১৯ নতুন দল

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা ৭৬টি দলের মধ্যে ১৯টি নিবন্ধন পাচ্ছে না। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আবেদন পত্র যাচাই-বাছাইয়ে গঠিত কমিটি এসব দলের আবেদন বাতিলের সুপারিশ করেছে। এরমধ্যে নিয়ম মেনে পাঁচ হাজার টাকার ট্রেজারি চালান জমা না দেওয়ায় ১৪টি এবং স্বাক্ষরবিহীন আবেদনের কারণে বাকি পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ করা হয়।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আবেদনকৃত অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধনের শর্ত পূরণে পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এসব দলকে সংশোধনের জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলগুলো হচ্ছে- গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী), তৃণমূল ন্যাশনাল পার্টি, বাংলাদেশ হিন্দুলীগ, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ঘুষ নির্মূল পার্টি (বিজিএনপি), বাংলাদেশ সততা দল (বিএইচপি), জাতীয় পরিবার কল্যাণ পার্টি (জেপিকেপি), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (বিআইপি), বাংলাদেশ শান্তির দল, কৃষক শ্রমিক পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (বিএনডিপি), বাংলাদেশ ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট- বিডিএম (প্রতীক নেই) ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ভাসানী ন্যাপ (প্রতীক নেই)।

এ ছাড়া নির্ধারিত ফরমে আবেদন না করায় সুশীল সামাজিক আন্দোলন-এসএসএ, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস ও মৌলিক বাংলা নামক ৪টি রাজনৈতিক সংগঠনের আবেদনে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষর না থাকায় সেগুলো বাতিল করা হয়।

কমিশন সূত্র আরো জানায়, নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করে চ‚ড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে। এটি কমিশনের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এর ধারা ৭(৫) অনুসারে রিপোর্টে ৫৭টি রাজনৈতিক দলকে অনূর্ধ্ব ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় দলিলাদি সরবরাহসহ বিদ্যমান ত্রুটিগুলো সংশোধন করার সুপারিশ করা হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দলের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য সময়ের সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি ১৯টির আবেদন ওই ধারার আওতায় না পড়ায় তা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে যেসব দল নিবন্ধন উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, সেগুলোর মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় ও কমিটি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে কমিশন। এরপর নিবন্ধন শর্ত পূরণকারী দলগুলোর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। ওই সব দলের ওপর দাবি-আপত্তি শেষে নিবন্ধন দেওয়া হবে। তবে প্রাথমিক বাছাইয়ে মোটামুটি কাগজপত্র পাওয়া গেছে, এমন দলের সংখ্যা খুবই সামান্য। এ সংখ্যা পাঁচটির বেশি নয়।

এ বিষয়ে ইসির একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন উপযোগী হিসেবে বাছাই করাদের মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় ও কমিটির খোঁজ নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন পাওয়ার পর শর্ত পূরণকারী দলগুলোর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। তাদের বিষয়ে দাবি-আপত্তি শেষে নিবন্ধন দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, নতুন দলকে ১৫ দিন সময় দেওয়া, বিজ্ঞাপন দিয়ে দাবি-আপত্তির সময় দেওয়া এবং মাঠের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া, সব মিলিয়ে চলতি মার্চ মাসে কাজ শেষ হবে না। আগামী মাসে কাজ শেষ করতে পারলেও তেমন অসুবিধা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে অন্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়। বর্তমানে কমিশনে ৪০টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের সময় মাত্র দুটি দল নিবন্ধন পায়। আর ২০০৮ সালের নিবন্ধন পাওয়া ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন একই বছর আদালতের আদেশে বাতিল করা হয়। এ প্রেক্ষিতে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে গত ৩০ অক্টোবর আবেদন আহ্বান করে ইসি। ৩১ ডিসেম্বর আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল।