নিশ্চিন্তে খাবেন প্রাণ-মিল্কভিটা-আড়ংয়ের দুধ : অতিরিক্ত সচিব

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রাণ, মিল্কভিটা ও আড়ংয়ের দুধসহ অন্যান্য কোম্পানির যেসব দুধ বাজারে রয়েছে সেগুলো নিশ্চিন্তে খাবেন। এসব দুধে কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ‘নিরাপদ তরল দুধ উৎপাদন : দেশীয় দুগ্ধ শিল্প রক্ষা ও বিকাশে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ডেইরি শিল্পকে ধ্বংস করতে চক্রান্ত চলছে। একশ্রেণির শত্রু এ শিল্পের পিছনে লেগেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ কাজ করেছেন।

‘কোম্পানির সাত ধরনের পাস্তুরিত দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক এবং তিন ধরনের দুধে ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে’ -গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। গত ২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রফেসর ফারুকের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত সচিব বলেন, কোনো গবেষক কোনো বিষয়ে গবেষণা করলে এবং গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করার বিষয়ে কিছু এথিক্স মেনে চলতে হয়। আপনি এথিক্স না মেনে যা করেছেন তা ভুল করেছেন। আপনার গবেষণার ফলাফল কি পিআর রিভিউ জার্নালে প্রকাশ করেছেন? তা না করে আপনি ভুল করেছেন। সাতদিনের মধ্যে জবাব না দিলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রাইভেট সেক্টর যদি এগিয়ে না আসে তাহলে দুগ্ধ শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারব না। সবাইকে প্রতিদিন দুধ খাওয়ার জন্য এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য আহ্বান জানান তিনি। বলেন, দুধ জান্নাতের খাবার। কোনো ফার্মার চায় না তার দুধে ভেজাল থাকুক। একটা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে এ শিল্পকে যারা ধ্বংস করতে চান তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না।

তিনি আরও বলেন, দেড় কোটি শিশুকে স্কুল ফিডিং দেওয়া হবে, সেখানে এক কাপ করে দুধ দেওয়া যায় কি না সে বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি। এছাড়া ৭০০ স্কুলে শিশুদের দুধ খাওয়ানোর কর্মসূচি নিয়েছি।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ দুধ উৎপাদনের জন্য খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও বৈজ্ঞানিক উপায় গবাদি প্রাণী পালন, প্রযুক্তি ব্যবহার ও সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদফতর নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। এছাড়া দেশে উৎপাদিত তরল দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকার কর্তৃক পরিচালিত মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের অনুমোদনক্রমে বাজারজাত করে। এসব পণ্য বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাজারজাতকরণের অনুমতি পায়। এসব পণ্যের গুণগত মান নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, এছাড়া বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময় এসব পণ্যের মান পরীক্ষা করে। সম্প্রতি গবেষক ড. শাহলীনা ফেরদৌস এবং প্রফেসর এ বি এম ফারুক কর্তৃক প্রচারিত রিপোর্টে দেশের তরল দুধ বাজারজাতকারী স্বনামধন্য ব্র্যান্ডগুলোতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য উপাদান পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। অথচ তার পরদিনই আদালতের নির্দেশে বিএসটিআই জানায়, এসব পণ্যে কোনো রকমের সমস্যা নেই।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু দুধ একটি স্পর্শকাতর খাদ্যদ্রব্য বিধায় ড. শাহনীলা ফেরদৌস এবং প্রফেসর এ বি এম ফারুক কর্তৃক প্রচারিত রিপোর্টের ফলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ দেশীয় দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা নিম্নমানের গুঁড়ো দুধের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।