নুসরাত হত্যা মামলার আসামি আ.লীগ নেতা ঢাকায় গ্রেপ্তার

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক, পৌর কাউন্সিলর মোকসুদ আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় কাউন্সিলর মোকসুদ আলমকে গ্রেফতারের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মনিরুজ্জামান।

তিনি বলেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য গণমাধ্যমকে পরে জানানো হবে। নুসরাতের ভাই নোমানের দায়ের করা মামলার এজাহার নামীয় আসামি ছিলেন তিনি।

ওই প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা ৭ দিনের রিমান্ডে আছেন। এছাড়া ওই মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন এবং নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, নুসরাতের সহপাঠী ও মামলার প্রধান আসামী সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার ভাগনী উম্মে সুলতানা পপি ও আরেক মাদরাসা শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ ৫ দিনের রিমান্ডে আছে।

এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখোনও পলাতক রয়েছেন- সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের ওই মাদ্রাসার ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামিম, হাফেজ আবদুল কাদের ও নুর উদ্দিন।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।

এর আগে ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানীর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।

পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় না ফেরার দেশে চলে যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি (১৮)। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো গেল না। টানা ১০৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মানেন এই ছাত্রী।

প্রসঙ্গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা।

তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।

এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন নুসরাত। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে।