নেতাকর্মীরা গিয়েছিলেন হামলা ঠেকাতে : নিজাম হাজারী

রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়ার পথে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অংশ হিসেবে দাবি করেছে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ। এর সঙ্গে সরকারি দলের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয় বলেও দাবি দলটির। তবে হামলার খবর শুনে এই হামলা ঠেকাতে দলীয় নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।

বুধবার দুপুরে ফেনী শহরের একটি চাইনিজ রেস্টুন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজাম হাজারী এসব কথা বলেন।

গত শনিবার রোহিঙ্গাদের দেখতে সড়কপথে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর গাড়িবহর ফেনীর মহিপালে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত হামলা চালায়। খালেদা জিয়ার গাড়ির পেছনে থাকা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। এতে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। শুরু থেকেই বিএনপি এর জন্য সরকারি দলকে দায়ী করে আসছে। তবে আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অংশ।

সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ হাজারী বলেন, ‘হামলার ঘটনায় নিজ দলের নেতাকর্মীরাই দায়ী। পূর্ব বিরোধের জের ধরে শনিবার তারা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়।’

সাংসদ জানান, ইতিমধ্যে পুলিশ হামলাকারীদের শনাক্ত করছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তারা যে দলেরই হোক পার পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন আলোচিত এই সাংসদ।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নিজাম হাজারী বলেন, ‘হামলার খবর শুনে আশপাশের ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে সেখানে গিয়েছিলেন। আমি নিজেও আক্রান্ত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।

নিজাম হাজারী বলেন, ‘শনিবার খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলা করে উল্লেখযোগ্য আন্দোলনে ইস্যু তৈরি করতে ব্যর্থ হয়ে মঙ্গলবার ফেরার পথে মহিপালে ফের দুটি বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে এবং দলীয় কর্মীরা গাড়ি ভাঙচুর করে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।’

জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ফেনী বিএনপি বহু গ্রুপ-উপ গ্রুপে বিভক্ত। একদিকে ভিপি জয়নাল গ্রুপ, অন্যদিকে রেহানা আক্তার রানু গ্রুপ, আরেকদিকে আবদুল আউয়াল মিন্টু গ্রুপ ও গাজী মানিকসহ অসংখ্য গ্রুপে বিভক্ত। তারা কেউ অপরের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেন না। ইতিমধ্যে বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়াকে কেন্দ্র করে উল্লিখিত গ্রুপগুলো আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। গাড়িবহরে থাকা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার গাড়িগুলোকে লক্ষ্য করে বহুধা বিভক্ত ফেনীর বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা ও ভাঙচুর চালায়।’

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘বেগম খালেদা জিয়া ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল মাঠের সভায় তার উপস্থিতিতে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে জনসভাটি পণ্ড হয়ে যায়। ইতিপূর্বেও ফেনীর সার্কিট হাউস থেকে বেগম জিয়া চট্টগ্রাম যাওয়ার প্রাক্কালে সার্কিট হাউজের অভ্যন্তরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গাজী মানিক গ্রুপ তার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে।’

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বি.কম, সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামান, সহ-সভাপতি মাস্টার আলী হায়দার, প্রিয়রঞ্জন দত্ত, পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার, দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশ্রাফুল আলম গীটার ও নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।