নেতৃত্ব হারাতে চলেছেন মুশফিক!

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষে এক-দেড় মাসের বিরতি। এরপর পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা আছে শ্রীলঙ্কা দলের। কিন্তু ডিসেম্বরের ওই সিরিজের টেস্টে কে নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ দলকে?

প্রশ্নটা এখনই উঠছে, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ দিয়েই সম্ভবত অবসান হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিম-যুগ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের পর এবার টেস্টের অধিনায়কত্ব থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মোটামুটি নিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক পরিচালক কাল মুঠোফোনে নিশ্চিত করলেন, ‘আমরা মুশফিকের বিকল্প ভাবতে শুরু করেছি। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তাঁর কিছু বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। অনেক সিদ্ধান্তও ভুল হচ্ছে।’

মাশরাফি বিন মুর্তজা টেস্ট খেলছেন না। মুশফিককে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে টেস্ট দলের সম্ভাব্য অধিনায়ক হতে পারেন তিন সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল বা মাহমুদউল্লাহর মধ্যে যেকোনো একজন। বিসিবির আগ্রহটা সাকিবের দিকেই বেশি। তবে এই চিন্তার সমান্তরালে তাদের এটাও ভাবতে হচ্ছে যে সাকিব আদৌ টেস্ট খেলবেন কি না বা খেললেও নিয়মিত খেলবেন কি না। বিশ্রাম চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। সাকিবকে নিয়ে বিসিবির দ্বিধাদ্বন্দ্বের এটাই কারণ।

সাকিব না হলে তামিমেরই টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছে সূত্র। মাহমুদউল্লাহর পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাবের কারণেই তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না বোর্ড। অধিনায়কত্বের চাপে যদি সেটা আরও নুয়ে পড়ে! আবার ফর্মে না থাকা অবস্থায় নিজের সঙ্গে লড়াইয়েও অনেক সময় বোঝা হয়ে দাঁড়ায় নেতৃত্বের বাড়তি চাপ। বিসিবির ওই পরিচালক অবশ্য বলেছেন, ‘পরবর্তী টেস্ট সিরিজের আগে আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় আছে। মুশফিকের পরিবর্তে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেই আলোচনা এখনো হয়নি। বোর্ড নিশ্চয়ই ওদের সঙ্গে কথা বলবে।’

টেস্টে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বেই। বাংলাদেশ দলের ১০টি টেস্ট জয়ের ৭টিই তাঁর অধিনায়কত্বে। ব্লুমফন্টেইন টেস্টের আগে মোট ৩৩টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে সাত জয় ছাড়াও মুশফিকের দল ড্র করেছে ৯ টেস্টে। হার ১৭টিতে। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের উত্থানও তাঁর হাত ধরেই। অধিনায়কত্বের চাপ মুশফিকের ব্যাটিংয়েও কখনো সমস্যা তৈরি করেছে বলে মনে হয়নি।

কিন্তু দুর্ভাগ্য মুশফিকের, চলতি ব্লুমফন্টেইন টেস্টে সবই তাঁর প্রতিকূলে যাচ্ছে। দুই টেস্টেই দলের ব্যাটিং-বোলিং পড়েছে চরম দুর্দশায়। তাঁর নিজের ব্যাট থেকেও যেন হারিয়ে গেছে সাবলীল ছন্দ। বুমেরাং হয়ে ফিরছে সংবাদ সম্মেলনে বলা কথাগুলো।

প্রথম টেস্টের পর মুশফিক কড়া সমালোচনা করেন তাঁর বোলারদের। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংস শেষেও তা-ই। ব্লুমফন্টেইনে টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তাঁর উত্তর ছিল, ‘আমার মনে হয় টসে জেতাটাই ভুল হয়ে গেছে…।’ এ ছাড়া অধিনায়ক হয়েও তাঁর বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তটা টিম ম্যানেজমেন্টের, ফাঁস করে দিয়েছেন সেটিও। এসব মন্তব্যের কোনোটাই বোর্ড সহজভাবে নেয়নি। ‘অধিনায়ক প্রকাশ্যে এভাবে বোলারদের সমালোচনা করতে পারেন না। টসে জিতে ভুল হয়েছে, এটাই বা কেমন কথা! তাঁর এসব মন্তব্যে বোর্ড সন্তুষ্ট নয়’—জানিয়েছেন বিসিবির ওই পরিচালক।

ব্লুমফন্টেইন টেস্টে টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তে কাল ঢাকায় সংবাদমাধ্যমের কাছে সরাসরিই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, ‘এ ধরনের পিচে ব্যাটিং না নেওয়ার যুক্তিই হতে পারে না। এটা মুশফিকই ভালো বলতে পারবে।’

সব মিলিয়ে মুশফিকের জন্য আকাশটা বেশ মেঘলাই হয়ে উঠছে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজের যেহেতু দেরি আছে, টেস্ট অধিনায়ক বদলের চূড়ান্ত ঘোষণাটা দিতে হয়তো আরেকটু সময় নেবে বিসিবি। অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের মধ্যে তো নয়ই। তা ছাড়া পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক কে হবেন, সেটাও তো ঠিক করতে হবে।