পদ্মার পে‌টে ২শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঝুঁ‌কি‌তে হাসপাতাল

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপ‌জেলায় ভয়াবহ নদী ভাঙ‌ন শুরু হ‌য়ে‌ছে। গত চার দিনে পদ্মার ডান তীরে নদী ভাঙনে নড়িয়ার মূলফৎগঞ্জ বাজারের প্রায় ২শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হ‌য়ে গে‌ছে। ২৪ ঘণ্টার ম‌ধ্যে নদী গ‌র্ভে চ‌লে যে‌তে পা‌রে ন‌ড়িয়া (মূলফৎগঞ্জ) উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্স । বন্ধ রয়েছে চিকিৎসা সেবা। এলাকায় নেই কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ। অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে হাসপাতালের মালামাল । পা‌শের ভব‌নে ভ‌র্তিকৃত রোগী‌দের স‌রি‌য়ে নেয়া হ‌য়ে‌ছে । ছোট হচ্ছে নড়িয়ার মানচিত্র । পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, নড়িয়া উপজেলার মুলফৎগঞ্জ বাজারটি পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্প‌তিবার ভাঙনে বাজারের ২শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। এ নিয়ে গত সাত দিনের ভাঙনে ৩শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে র‌য়ে‌ছে ২শ বছরের পুরাতন এ বাজারের আরও ১ হাজার ৩শ প্রতিষ্ঠান। ভাঙনে আতঙ্কে র‌য়ে‌ছে পাশের কেদারপুর ও পূর্বনড়িয়া গ্রামের দেড় হাজার পরিবার। গত তিন‌দি‌নে ওই দুটি গ্রামের ৩৫০ পরিবার তাদের বসত ঘর সরিয়ে নিয়েছে। ভাঙনের কারণে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ র‌য়ে‌ছে।

মুলফৎগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুর হোসেন দেওয়ানের ভবনটি সোমবার বি‌কেল ৫টার দি‌কে নদীতে ধসে পড়ে। পাশের আরেকটি তিন তলা ভবনে তার বেসরকারি ক্লিনিক ছিল। সেই ভবনটি বুধবার দুপু‌রে ধসে পড়ে। এ সব দেখে কান্নায় ভেঙে পরেন নুর হোসেন দেওয়ান।

তিনি বলেন, আমাদের কিছুই অবশিষ্ট রইল না। আল্লাহ জানেন আমাদের ভাগ্যে কি আছে। বাজারের প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী আতঙ্কিত।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নড়িয়া উপজেলা শহ‌রের পাশে কেদারপুর ইউনিয়নে মুলফৎগঞ্জ বাজারটি গড়ে ওঠে। ২শ বছর আগে ওই এলাকার মানুষ বাজারটি গড়ে তোলে। নড়িয়ার সবচেয়ে বড় বাজার হওয়ায় ওখানে ন‌ড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। বাজারে রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। বাজারে রয়েছে দেড় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওই বাজারকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার অন্তত ১০ হাজার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করেন।

গত বছর বাজার থেকে ৫শ মিটার দূরত্বে ছিল নদী। এ বছর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থে‌কে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে নদী বাজারের কাছে চলে এসেছে। সোমবার সকাল থেকে ব্যপক ভাঙন শুরু হয়। সোমবার থে‌কে বৃহস্প‌তিবার পর্যন্ত ভাঙনে ২শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের ২৫টি ওষুদের দোকান বিলীন হয়েছে। দুটি বেসরকারি ক্লিনিক সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত সাত দিনে ওই বাজারের ৩শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে।

মুলফৎগঞ্জ বাজারে গিয়ে জানা যায়, বাজারের উত্তর প্রান্তে দেওয়ান মার্কেট নদী গ‌র্ভে বি‌লীন হ‌য়ে গে‌ছে । বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুর হোসেন দেওয়ানের তিনতলা একটি বিপনি বিতান নদীতে বসে পড়ে‌ছে। ওই ভবনের পাশের আরও দুইটি তিন তলা ভবন বুধবার দুপুরে নদীতে ধসে পড়েছে । আতঙ্কে আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

গত রোববার রাতে কেদারপুর গ্রামের ২শ মিটার এলাকা হঠাৎ ধসে পড়েছে। রাতে ওই এলাকায় মাইকিং করে মানুষদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে কেদারপুর ও পূর্বনড়িয়া গ্রামের মানুষ তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। সোমবার থে‌কে বুধবার পর্যন্ত ওই গ্রামের অন্তত ২শ পরিবার তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে।

মুলফৎগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ও কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, বসতবাড়ি, ফসলি জমির পর আজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। নিস্ব হয়ে গেলাম। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারলাম না।

ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্সের দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত আবা‌সিক মে‌ডি‌কেল অফিসার ডা. তহীদুল বাশার ব‌লেন, যে কোনো সময় উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্সটি নদী গ‌র্ভে চ‌লে যে‌তে পা‌রে। তাই রোগী‌দের স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্সের নিকটবর্তী ক‌য়েক‌টি ভব‌নে চি‌কিৎসা দেয়া হ‌চ্ছে। ব্যাহত হ‌চ্ছে চি‌কিৎসা ব্যবস্থা।

ন‌ড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ভাঙনের কারণে মুলফৎগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা বিপযর্স্ত অবস্থায় র‌য়ে‌ছে। ওই বাজারের প্রায় দেড় হাজার ব্যবসায়ী ক্ষ‌তিগ্রস্ত। বাজারটির ওপর ওই এলাকার অন্তত ১০ হাজার পরিবার নির্ভরশীল । ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সরকারিভা‌বে সহায়তা করা হবে।

তি‌নি ব‌লেন, ভাঙন কব‌লিত এলাকার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ইতিম‌ধ্যে ক্ষ‌তিগ্রস্ত ৩শ পরিবারকে শুকনো খাবার ও বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহ‌যো‌গিতা করা হ‌য়ে‌ছে।