জুমাতুল বিদায় মসজিদে মুসল্লিদের ভিড়

দেশ ও মুসলিম ভ্রাতৃত্বের সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার পবিত্র জুমাতুল বিদা পালিত হয়েছে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে পবিত্র শবেকদর পালন করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

মহান রাব্বুল আলামিনের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের শেষ জুমা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে খুবই গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ।

রমজানের শেষ জুমা হওয়ায় শুক্রবারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। একই সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২৭ রমজানের পূর্বরাত হওয়ায় শবেকদরও পালিত হয়েছে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে শবেকদর একটি মহিমান্বিত রাত। হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ রাত। এই সেই রাত, যে রাতে পবিত্র কোরআনের পূর্ণ একটি সূরা ‘আল-কদর’ অবতীর্ণ হয়।

এসব গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও পুণ্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার ও দান-খয়রাতের মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করেন।

জুমাতুল বিদা উপলক্ষে বিশেষ মহিমাময় এ নামাজে অংশ নিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে আজানের বহু আগে থেকেই জড়ো হতে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণ আজানের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শোনেন খুতবা, আদায় করেন সালাত। জুমাতুল বিদায় বায়তুল মোকাররমে প্রায় ১ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। বরাবরের মতো এবারও লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। স্থান সংকুলন না হওয়ায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামনে ও উত্তর গেটসংলগ্ন রাস্তায় নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।

এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সব মসজিদে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। মসজিদ ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তায় কাতারবন্দি হয়ে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। পবিত্র জুমাতুল বিদা মসজিদে মসজিদে দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোনাজাত করেন মুসল্লিরা। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলমানদের রক্ষা ও বায়তুল মোকাদ্দাস উদ্ধারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাহায্য কামনা করা হয়।

বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর অধিকাংশ মসজিদের সামনেই ছিল ভিক্ষুকদের ভিড়। নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দু’হাত খুলে দান-খয়রাত করেন। অনেক মুসল্লিকে তাদের নিজেদের বাসা থেকে ‘জায়নামাজ’ আনতে দেখা গেছে। পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ সারা দেশের সব মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও বয়সের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন। মোনাজাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করা হয়। বিশেষ করে, তারাবির নামাজের পর সারা দেশে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিরা কোরআন তেলাওয়াত করেন, নফল নামাজ আদায় করে সেহরীর আগে বাসায় ফেরেন। অনেক মুসল্লি কবরস্থানে গিয়ে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে তাদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করেন।

একইসঙ্গে জুমাতুল বিদা ও শবেকদর হওয়ায় রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাসে মুসলমানদের জন্য ছিল এক দুর্লভ প্রাপ্তি। দুটি ইবাদতের ও অধিক সওয়াব অর্জনের দিবস। হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজানের গোটা শেষ দশকেই শবেকদর অনুসন্ধান করতেন। ইতিকাফ করতেন। অপেক্ষাকৃত অধিক ইবাদত করতেন।

হজরত আয়েশা (রা.) ইরশাদ করেন, রমজানের শেষ দশকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এত অধিক ইবাদত করতেন যা অন্য সময় করতেন না।

হাদীসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, রমজানের শেষ দশ দিনের মধ্যে বেজোড় সংখ্যার রাতে শবেকদর অনুসন্ধান করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে অধিকাংশ হাদিস বিশেষজ্ঞরাই ২৭ রমজানের পূর্ব রাতকেই শবেকদরের রাত হিসেবে আখ্যায়িত করে তা যথাযথভাবে পালনের তাগিদ দিয়েছেন।