পরিমাণ মতো খাবার পান না দেশের ২ কোটি মানুষ

গেল কয়েক বছর ধরে খাদ্য উৎপাদনে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান এটাও বলছে, এখনও পরিমাণ মতো খাবার পান না; এদেশে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। সেই সঙ্গে শঙ্কার কথা, বিশ্বব্যাপী বেড়েছে ক্ষুধার্ত মানুষ। তাই, খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

প্রয়োজনে খাদ্য আইন করার পরামর্শ তাদের। পরিকল্পনা কমিশনের আশ্বাস, ২০৩০ সালের মধ্যেই ক্ষুধামুক্ত হবে বাংলাদেশ।

‘বেগুন ভাঙা, পটল ভাঙা কুড়ায় নিয়ে আসি। ডেইলি আমরা এক দেড়শ’ টাকার সবজি কিনি আর বাকি সব টুকাই নিয়ে আসি।’

জামালপুরের মাজেদা খাতুন, শোনাচ্ছিলেন তার সাড়ে তিন দশকের ব্যবসার গল্প। পণ্য সম্ভারের বর্ণনা শুনে হয়তো অবাক হতে পারেন; কিন্তু এটাই বাস্তবতা যে, এসব খাদ্যপণ্যেরও ভোক্তা রয়েছে খোদ রাজধানীতেই। এটাও জানালেন, তিন বেলা ভাত খান না তার পরিবারের তিন সদস্য। যাও বা জুটে সেখানেও প্রশ্ন থেকে যায় কতটুকু জোটে খাদ্যমান?

মাজেদা খাতুন বলেন, ‘রাত্রে ভাত রান্না করি, সকালে খাই। খায়ে বাঁচতে হবে তো।’

এমন অনেক পরিবার রাজধানী ঢাকাতেই আছে, যেখানে উদরপূর্তির কাছে তেমন একটা পাত্তা পায় না পুষ্টিকর খাবারের চিন্তা।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এখনও প্রায় ২ কোটি মানুষ রয়েছে; যারা তিন বেলা ঠিক মতো খেতে পান না এখনও। তাই তো, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, চালসহ নানা ধরনের খাদ্যপণ্য উৎপাদনে সাফল্য দেখানো বাংলাদেশে এবার দরকার খাদ্য প্রাপ্তির শতভাগ নিশ্চয়তা। আর সেই প্রয়োজনে খাদ্য আইন করার পরামর্শ অর্থনীতিবিদরা।

বিআইডএস’র জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘খাদ্যের প্রাপ্যতাটাকে মানুষের আইনগত অধিকার করতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশে এটা করা হয়েছে। উৎপাদন অনেক ভালো হতে পারে কিন্তু যদি সেই খাদ্যে মানুষের এক্সেস না থাকে তাহলে দুর্ভিক্ষ পর্যন্ত হতে পারে।’

সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষ বেড়েছে প্রায় ৪ কোটি, বাড়ছে আরও। এই ধাক্কা যেন বাংলাদেশে না লাগে সেজন্য আয়ের পথ শক্তিশালী করার পরামর্শ তাদের।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘না খেয়ে এখন আর কেউ মরে না বাংলাদেশে। ইদানিংকালে গ্লোবাল অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখছি, ফর গ্রান্টেড নেয়াটা ঠিক হবে না। কিছু কিছু জায়গায় হলে এই ধরণের হাঙ্গারের প্রবলেম ফিরে আসতে পারে।’

তবে, পরিকল্পনা কমিশন বলছে, যে কোন আপদ মোকাবেলা করার মতো চালসহ খাদ্যশস্যের মজুদ রয়েছে পর্যাপ্ত। শুধু তাই নয়, লক্ষ্যমাত্রার আগেই ক্ষুধামুক্ত হবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শাসুল আলম বলেন, ‘দেশে খাদ্য উৎপাদন সন্তোষজনক। কিছুটা হাঙ্গারতো রয়েছেই, না হলে ১১ শতাংশ হতদরীদ্র হয় কীভাবে? সবাই যাতে খাদ্য সময় মতো পেতে পারে সেজন্য কিছু বিশেষ প্রোগ্রাম আছে।’ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ ভোগেন অপুষ্টিতে; সেদিকেও নজর বাড়ানোর তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।-সময় টিভি’র সৌজন্যে।