পরীক্ষা করে দেখা গেল শরীরে কেনো কিডনিই নেই!

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মায়ের বাম কিডনির অপারেশনের পর ডান কিডনি ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে আসলে কিডনিটি কোথায় গেল। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর সিটিস্ক্যান করে দেখা যায়, তার দেহে দুটো কিডনিই অনুপস্থিত। এরপর করা হয়েছে আরো একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম। সেখানেও কিডনির হদিস পাওয়া যায়নি।

রোগীর স্বজনের দাবি, হয়তো বাম কিডনির অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে চিকিৎসক ডান কিডনিটির কোনো ক্ষতি করেছেন। যে কারণে পরবর্তীতে সেটি ফেলে দিয়েছেন অথবা অন্য কোনো রোগীর দেহে ওই কিডনিটি প্রতিস্থাপন বা বিক্রি করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দাবি, কিডনি উধাও হয়নি, সেটি রোগীর দেহেই রয়েছে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান দুলালের তত্ত্বাবধানে রফিক শিকদারের মা রওশন আরা’র কিডনি অপারেশেন করা হয়। এরপর ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের ‘তাড়ার’ কারণে তাকে মগবাজারের ইনসাফ কিডনি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর সিটিস্ক্যান করে দেখা যায়, তার দেহে দুটো কিডনিই অনুপস্থিত। এরপর করা হয়েছে আরো একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম। সেখানেও কিডনির হদিস পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ও ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। তবে ভুক্তভোগীর স্বজনদের দাবি, প্রতিবেদনে শুধুমাত্র এতটুকু উঠে আসলেই হবে না যে, রোগীর দেহে কিডনি আছে, নাকি নেই। কিডনিটি তার দেহে আছে কিনা সেটি যেমন জানাতে হবে, ঠিক একইভাবে কিডনিটি তার দেহে যদি থেকে না থাকে তবে সেটি কি চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফেলে দেয়া হয়েছে নাকি অন্য কোনো রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সেই বিষয়টিও তুলে ধরতে হবে। আর সেটি না হলে তারা আদালতের মাধ্যমে বিচারবিভাগীয় তদন্তের আবেদন করবেন।

এ বিষয়ে রোগীর সন্তান রফিক শিকদার বলেন, যেহেতু আমার মায়ের দুটি কিডনিই পেটে অনুপস্থিত তাই আমার মনে হচ্ছে, বাম দিকের কিডনির অপারেশন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা ডান দিকের কিডনিতে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করেছেন এবং সেটি ঠিক করতে না পারায় দুটো কিডনিই ফেলে দিয়েছেন। অথবা ডান দিকের ভালো কিডনিটি অন্য কোনো রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করেছেন।

রফিক শিকদার বলেন, অস্ত্রোপচারের পর ল্যাবএইডে মায়ের সিটিস্ক্যান করিয়েছি। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমার মায়ের দেহে একটি কিডনিও নেই। সেই পরীক্ষার ফলাফল ইনসাফ কিডনি হাসপাতালের চিকিৎসক প্রফেসর ফখরুল স্যারকে দেখিয়েছি। তিনিও বলেছেন, আমার মায়ের দেহে কোনো কিডনি নেই।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরো নিশ্চিত হতে বিআরবি হাসপাতালে একটি আল্ট্রাসনোগ্রামও করিয়েছি, সেখানকার পরীক্ষায়ও কিডনির হদিস পাওয়া যায়নি। সেই ফলাফল দেখে অন্য চিকিৎসকরাও বলেছেন, আমার মায়ের দেহে কিডনি নেই। এত আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা যেহেতু জানিয়েছেন, আমার মায়ের দেহে কিডনি নেই সুতরাং আমি হাবিবুর রহমানের কথায় বিশ্বাস রাখতে পারছি না। রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) আমি আদালতে এ বিষয়ে রিট করব।

বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, অস্ত্রোপচারের পর রোগীর সিটিস্ক্যান এবং আল্ট্রাসনোগ্রামে লেখা রয়েছে, কিডনি ইজ নন ভিজ্যুয়ালাইজ। এর মানে হয়তো কিডনি আছে, সেটা দৃশ্যমান হচ্ছে না কিংবা কিডনি নেই। তবে চাইলেই বাম দিকের কিডনির অপারেশন করতে গিয়ে ডান দিকের কিডনির অপারেশন করা সম্ভব নয়। কারণ ডান দিকের কিডনির অপারেশন করতে গেলে বাম দিকে যেভাবে প্রসেসিং (অ্যানেসথেশিয়া দেয়া) করা হয়েছে ঠিক একইভাবে ডান দিকেও প্রসেসিং করতে হবে, তাই অবহেলা কিংবা ভুলে ডান দিকের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।

অন্য রোগীর দেহে কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, চাইলেই একজনের দেহের কিডনি অন্য কোন ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা যায় না। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কমপক্ষে তিন থেকে ছয় মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। এক্ষেত্রে দুই রোগীর অস্ত্রোপচারও একই সঙ্গে করতে হয়। আর কিডনি ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রতিস্থাপন করা না গেলে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। এসব অভিযোগ একেবারেই অমূলক।

রোগীর দেহে যদি কিডনি না থাকে তবে তিনি বেঁচে থাকতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরবি হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এম এ সামাদ বলেন, ‘কোনো মানুষের দেহে যদি একটি কিডনিও না থাকে। তবে তাকে ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে কোনো মানুষকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা যায়। রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই সময় কমবেশি হতে পারে।

তবে, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি ছাড়াই ৮ থেকে ১৫ বছর বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। সেটা খুবই ব্যয় বহুল। এটি উন্নত দেশে সর্বাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মাধ্যমে করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, কিডনি না থাকলে মানুষের দেহে রক্তচাপসহ অন্যান্য যেসব জটিলতা দেখা যায় সেগুলো ওষুধের মাধ্যমে সমাধান করা হয়। কিডনি মানুষের দেহে যেসব কাজ করে সেগুলো বিকল্প উপায়ে সম্পাদন করা হয়।

তবে কারো দেহে কিডনি থাকলে সেটি ভালো থাকুক কিংবা নষ্ট থাকুক তা সিটিস্ক্যান ও আল্ট্রাসনোগ্রামে অবশ্যই ধরা পড়বে বলে জানিয়েছেন এম এ সামাদ।