পাঁচটি স্যুটকেসে খাশোগির মরদেহ সৌদিতে নেয়া হয়

সাংবাদিক জামাল খাশোগির মরদেহের টুকরো করা অংশ পাঁচটি স্যুটকেসে করে সৌদি নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় দৈনিক সাবাহ’র প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, খাশোগি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর তাকে হত্যা করে মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে সাবাহ রোববারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যার পর তার টুকরো করা মরদেহ কনস্যুলেটের পাশ্ববর্তী সৌদি কর্মকর্তাদের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, খাশোগির মরদেহ লাপাত্তা করার কাজটি করেন ১৫ সদস্যের সৌদি কিলিং স্কোয়াডের অন্যতম তিন সদস্য মাহির মুতরিব, সালাহ তুবেগি ও তাহার আল হারবি। এর আগেও সংবাদ প্রকাশিত হয় মাহির আব্দুল আজিজ মুতরিব নামের ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির মরদেহ একটি বড় ব্যাগে করে কনস্যুলেট থেকে বের করে নিয়ে যান।

মুতরিব সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। প্রায়ই তাকে যুবরাজের সঙ্গে বিভিন্ন সফরে যেতে দেখা যায়। ২ অক্টোবর জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার দিন তিনি ইস্তান্বুল থেকে স্যুটকেসে করে খাশোগির টুকরো মরদেহ নিয়ে একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে সৌদি আরবে যান।

খাশোগি হত্যার দিন তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তার ব্যাগ পরীক্ষা করতে দেননি তিনি। এছাড়া ব্যক্তিগত ওই বিমানটির কোনও ফ্লাইট শিডিউল, বিমান ও ফ্লাইটের কোনও তথ্যও তিনি বিমানবন্দরে রাখেন নি। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সেদিন কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী মুতরিবকে বিমান বন্দরে খুব দ্রুত চলাচল করতে দেখা যায়।

এছাড়া খাশোগির মরদেহ লাপাত্তা করার সঙ্গে জড়িত তুবেগি দেশটির সোবাহিনীর একজন কর্ণেল ও সৌদি সায়েন্টিফিক কাউন্সিল অব ফরেনসিকের প্রধান। আল হারাবি জেদ্দায় যুবরাজ সালমানের বাড়িতে প্রতিরক্ষা দেয়ার স্বীকৃতি স্বরুপ সম্প্রতি সৌদি সৌদি রয়্যাল গার্ডে লেফটেন্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।

সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন খাশোগি হত্যার নির্দেশ এসেছে সৌদি সরকারের উপরমহল থেকে। ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা এক কলামে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা এটা ভালোভাবেই জেনে গেছি খাশোগি হত্যার নির্দেশ সৌদি রাজতন্ত্রের উপর মহল থেকে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাছাড়া আমরা এটাও জানি যে, ওই ১৮ জন নির্দেশ অনুযায়ী তুরস্কে এসেছে এবং খাশোগিকে হত্যা করে চলেও গিয়েছে। অবশেষে আমরা জানতে পারলাম খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ এসেছে সৌদি সরকারের উপর মহল থেকে।’ খাশোগি হত্যার নির্দেশদাতা সেই মাস্টার মাইন্ডের নাম প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন এরদোয়ান।

এদিকে এরদোয়ানের উপদেষ্টা ইয়াসিন আক্তার বলেছেন, খাশোগিকে হত্যার পর তার টুকরো টুকরো মরদেহ এসিড দিয়ে পোড়ানো হয়। হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও মরদেহ নিশ্চিহ্ন করতেই সৌদি কিলিং স্কোয়াড তার টুকরো টুকরো মরদেহ এসিড দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে বলে দাবি করেছেন তিনি।

প্রাথমিকভাবে এ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল সৌদি আরব। তবে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিবেচনায় ও পশ্চিমা বিশ্বের চাপে শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব স্বীকার করতে বাধ্য হয় খাশোগিকে তারাই হত্যা করেছে। তবে খাশোগির মরদেহের কোনো হদিস এখনও পাওয়া যায়নি।