রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এখন হুমকির মুখে :

‘পাঁচশত বছরের স্বাক্ষী দিনাজপুরের সুরা মসজিদ’

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট ইউনিয়নের চৌগাছা মৌজায় (হিলি স্থলবন্দর অথবা পাঁচবিবি রেলওয়ে স্টেশন) হতে উত্তরপূর্ব দিকে মাত্র ২০কিলোমিটার অদুরে) কিংবা ঘোড়াঘাট উপজেলা কেন্দ্র থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে পাকা রাস্তার উত্তর ধারে ৩৫০-২০০ গজ আয়তন বিশিষ্ট বিশাল একটি পাড়ওয়ালা দীঘির দক্ষিণ ধারে অবস্থিত “সুরা মসজিদ”।

নির্জন এলাকায় প্রায় ৫শ বছরের এক কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো দ্বাড়িয়ে আছে এ মসজিদ।
মসজিদটির নাম নিয়ে রয়েছে নানান কথা। কেউ বলেন সৌর মসজিদ, কেউ বলেন সুরা মসজিদ, আবার কেউ বলে শাহ সুজা মসজিদ।

জানা যায় সৌর শব্দের অর্থ আসমানী বা গায়েবী অর্থাৎ লোকচক্ষুর আড়ালে যা ঘটে বা হয় তাই গায়েবী। অর্থাৎ গায়েবী ভাবেই মসজিদটি নির্মীত হয়েছে। অনেকে বলেন- মোগল আমলে বাংলার নবাব সুজা এটি নির্মাণ করেন বলে এর নাম শাহ সুজা মসজিদ হয়েছে।

এমন ধরণের আরো অনেক কথা লোকমুখে শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে শাহ সুজার ক্ষমতা গ্রহণের অনেক আগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে।

মসজিদের নামকরণ ও নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে মসজিদের শিলালিপি, বা যে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে নির্মাণশৈলী বা স্থাপত্য কাঠামো নির্মাণকাল নির্ধারণে একটি অনুসঙ্গ বলে বিবেচিত হয়।

সেক্ষেত্রে গঠনশৈলীর উপর ভিত্তি করেই সম্ভাব্য নির্মাণকাল বের করা যায়। আলোচ্য মসজিদটির বাইরের দিকের আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪০-ফুট এবং পূর্ব পশ্চিমে ২৬-ফুট।
চার ফুট উচু মজবুত প্লাটফর্মের উপর মসজিদের কাঠামো গড়ে উঠেছে।
প্রধান কক্ষের আয়তন ভিতরে ১৬´১৬ ফুট।
প্রধান কক্ষের সাথে যুক্ত আছে ৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা।
পুরো মসজিদের দেয়ালে গায়ে অসংখ্য খোপকাটা মৌলিক টেরাকোটার অলংকরণ যা এই ইমারতের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

এছাড়া দর্শনার্থিদের মনে মসজিদের দেয়ালের সুসজ্জিত নকশা দৃষ্টিনন্দিত।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক দানী এটিকে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর আমলে নির্মিত বলে অনুমান করেন। উক্ত মসজিদটি সুলতানী আমলে (১৪৯৩-১৫১৮) খ্রিষ্ঠাব্দে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।
তবে ইতিহাসে চোখে পড়ে একই সময়ে একই আকৃতিতে তৈরী নওগাঁর মান্দায় ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ, টাঙ্গাইল আতিয়া মসজিদ সহ ঢাকার কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

তবে দু:খজনক হলেও সত্য কালের স্বাক্ষী- প্রায় ৫শ বছরের মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকা সুরা মসজিদ টি আজ প্রত্নতত্ত্ব ও সরকারি রক্ষনাবেক্ষনের অবহেলায় বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে এবং মুসুল্লিগনের নামাজে দাড়ানোর স্থান ধ্বসে পরছে।

দেশের অনেক স্থানে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা আজ বিলিন হবার পথে, তাই বিরল এই ইতিহাস আজ অযত্নে অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাবার আগেই অতিদ্রুত রক্ষনাবেক্ষনের কাজে কতৃপক্ষ এগিয়ে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

হতে পারে এ স্থাপনাটি দেশ তথা আসেপাশের পর্যটন শিল্পে ঐতিহাসিক সুলতানী আমলের নিদর্শনের গুরুত্ব বহন করবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখা ও ছবি : এম আই মিঠু