পাঁচ বছরের জন্য ‘জাতীয় সরকার’ ফর্মুলা বি চৌধুরীর

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরে পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় সরকার চায় বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। এমনটাই জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা (বি) চৌধুরী। মঙ্গলবার গুলশানের একটি কমিউনিটি ক্লাবে বিকল্পধারা আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি একথা জানান।

বি চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের পরে দেশের মানুষকে শান্তি দেয়ার জন্যে, নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে এবং দেশের অগ্রগতির করার জন্যে আমরা আগামী পাঁচ বছরের জন্যে একটি জাতীয় সরকার চাই।’

তিনি বলেন, ‘সহিংসতা হবে না, আগুন জ্বালানো হবে না, অন্যায়-অত্যাচার-অবিচার হবে না। আমরা কতগুলো ম্যাচুরড ব্রেইন একত্রিত করলে হয়তো ইনশা’আল্লাহ বাংলাদেশ আরেকটা সুযোগ পাবে।’

যুক্তফ্রন্ট গঠনের কারণ ‍তুলে ধরে ফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, ‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা নিউক্লিয়াস গঠন করেছি, যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছি। তার মাধ্যমে আমরা একটা নেতৃত্ব দিতে চাই। যেই নেতৃত্বে চরিত্র থাকবে, যেই নেতৃত্বে সততা থাকবে এবং যেই নেতৃত্বের কথা বলার দাম থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে শক্তির উত্থান চেয়েছি। সেই শক্তির মাধ্যমে আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দল বিশেষ করে সরকারি দলকে সাবধান করে দিতে পারব- দেশের ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র জনগণের হাতে চলে যাবে আপনারা কিছুই করতে পারবেন না।’

এসময় বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে না দেয়া, হাজার হাজার নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকিয়ে রাখা কোনোভাবে সহ্য করা যায় বলেও মন্তব্য করেন বি চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘মামলা করে রাজনীতিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে আগেই আমরা বলেছি। যখনই বিচার হয়, বিচারের রায় আসে। সুপ্রিম কোর্ট-হাইকোর্টের রায়কে আপনারা বুড়ো আঙ্গুল দেখান। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে!’

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘রুল অব ল’ তথা আইনের শাসন আছে কি? নির্বাচনী প্রক্রিয়া কিভাবে ট্যাম্পার করে দেখিয়ে দিয়েছেন। ২০১৪ সালে দেখেছি, এবার খুলনাতে দেখলাম। এভাবে চলতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘এ থেকে উত্তরণের অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে, আমরা এটা আদায় করব। সংসদ ভেঙে দিতে হবে ১০০ দিন আগে। নির্বাচনের তামাশা দেখতে চাই না। সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে নির্বাচনে। সাহসী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতির সামনে আজকে যে সংকট সেই সংকট কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। এই সংকট আজকে সমগ্র দেশের, সমগ্র জাতির। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে ভয়াবহ স্বৈরাচার যারা আমাদের সমগ্র অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাদেরকে বিদায় করতে হবে।’

তিনি বলেন, এজন্য ছোটখাটো সমস্যাগুলো দূর করে আমাদেরকে একটা ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সেই ঐক্যের মধ্য দিয়েই আমরা এই ভয়াবহ শক্তিকে পরাজিত করতে পারব।

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকেই দেশনেত্রীর জামিন আবেদন আবার আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তাকে গ্রেফতারের পর থেকেই। তাকে আটকিয়ে রাখার জন্যই এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সর্বশেষ এই কয়দিন ১১১ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এটা সত্যি সত্যি একটা মৃত্যুর মিছিল বলতে পারেন এবং সেই মিছিল চলছে, থামছে না।’

সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনার সংসদ সদস্যকে যদি প্রমাণ ছাড়া গ্রেফতার করা না যায়, তাহলে এদের নামে অভিযোগ আছে তারও কোনো প্রমাণ নেই। তাহলে এদের গুলি করে মারবেন কেন?’

এসময় মান্না বলেন, ‘জীবন বাঁচাবার জন্যে সমস্ত মানুষকে এক হতে হবে এটা ঠিক। ফখরুল ভাই, কথা কিন্তু আমাদের অনেক আছে। কারণ এই যে লড়াই করব একদিন একটা ভোট হবে, ভোটের পরে জিতে আপনারা সরকার গঠন করবেন। তখন আর আমাদের চিনবেন না যদি এমন হয়?’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য বলছি না, অহেতুক খোঁচাও দিচ্ছি না। শুধু এটিই বলছি- এটা বিবেচনায় রাখবেন। একই সঙ্গে লড়াই করতে চাই।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোনো শর্তছাড়া বেগম জিয়ার মুক্তি দেয়া উচিত যদি অংশগ্রহণমূলক চান। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই। এর বিকল্প যা কিছু হবে তা দেশের সর্বনাশ ডেকে আনবে।’

ইফতার মাহফিলের আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ।

ইফতারে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, বিজেপির আবদুল মতিন সউদসহ বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতারা।