পাঁচ বছরে ২৫ হাজার এমবিবিএস ডাক্তার

দেশে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে গত পাঁচ বছরে গড়ে ৫ হাজার করে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী এমবিবিএস পাস করেছেন। আগামী ৩ থেকে ৪ বছর গড়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার শিক্ষার্থী ডাক্তারি পাস করে বের হবে। পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে প্রতি বছর গড়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থী এমবিবিএস পাস করে বের হয়েছিল। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি আপাতদৃষ্টিতে সুখবর হলেও অদূর ভবিষ্যতে তা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। গত পাঁচ বছরে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী ডাক্তারি পাস করে বের হলেও তাদের মধ্যে কতজন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শিক্ষা গ্রহণ করে ‘দক্ষ ডাক্তার’ হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বিএমডিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত মোট ডাক্তারের সংখ্যা ৯৩ হাজার ৭৬৩ জন। এর মধ্যে এমবিবিএস ৮৫ হাজার ৬৩৩ জন ও ডেন্টাল ডাক্তারের সংখ্যা ৮ হাজার ১৩০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখা) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি পর্যায়ে ৩১টি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৬৯টিসহ মোট ১০০টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। সরকারি ৩১টিতে আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৩২০ ও বেসরকারিতে ৬ হাজার ২০৫টি আসন রয়েছে। চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মেডিকেল কলেজ পরিচালনার জন্য কোনো আইন নেই। বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন নীতিমালার আলোকে সব মেডিকেল কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ মেডিকেল কলেজেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। এছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ, ল্যাবরেটরি সুযোগ সুবিধা, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ও শয্যানুপাতে রোগী থাকে না। ফলে পাঁচ বছরের কোর্সে পড়াশোনা শেষ করে প্রায় শতভাগ এমবিবিএস পাসের সার্টিফিকেট পেলেও তারা হাতে-কলমে কতটুকু শিখে ডাক্তার হচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহবুব-ই-রশীদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমানে সরকারি মেডিকেল কলেজেই এনাটমি, ফিজিওলজি, এনেসথেসিওলজিসহ বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে শিক্ষকের তীব্র সংকট চলছে। আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে তো শিক্ষক নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, চিকিৎসা শিক্ষা কোনো পণ্য নয়। সুতরাং যে কোনো মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দেয়ার আগে অবশ্যই নীতিমালা অনুযায়ী দেয়া উচিত।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ বলেন, মেডিকেল কলেজ বিশেষ করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়াশোনার গুণগত মান বজায় রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর তীক্ষ্ণ নজরদারি করছে। গত দুই বছরে নতুন কোনো মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দেয়া হয়নি। যেগুলোর অনুমোদন রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণ না থাকায় শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত রাখা হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে চিকিৎসা শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিএমডিসির রেজিস্ট্রারের কাছে গত ৫ বছরে প্রায় ২৫ হাজার ডাক্তার পাস করে বের হওয়ার তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী ডাক্তারি পাস করেছে। তবে তাদের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।