চাল নিয়ে চালবাজি : পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে ‘চড়া’

লাগামহীন চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু তাতেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উল্টো চলছে চালবাজি। পাইকারি বাজারে কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা কমলেও খুচরাবাজারে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

পুরান ঢাকার বাদামতলী ও বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চালের দাম কমতির দিকে। বাজারে ক্রেতা কম। বিক্রি নেই বললেই চলে। গত কয়েকদিনে কেজিপ্রতি কমেছে তিন থেকে চার টাকা।

বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জনপ্রিয় রাইসের স্বত্বাধিকারী হাজি রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখন সব চালের দাম কমতির দিকে। তবে ক্রেতা নেই। বেচাবিক্রি খুবই খারাপ। দাম বাড়তির সময় মিল মালিকরা চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ করতো না। এখন তারা চাল বিক্রির জন্য ফোন করেন।

পাইকারি বাজার বাদামতলী ও বাবুবাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা কমে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৫৯ টাকায়। একইভাবে নাজিরশাইল ৬৪-৬৬ টাকা, আটাশ ৫২-৫৩ টাকা, ঊনত্রিশ ৫০-৫২ টাকা ও স্বর্ণা ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মোটা চালের (হাইব্রিড) সরবারহ কম। এ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৩ টাকায়।

বাবুবাজারের হাজি রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী হাজি জিয়াউল হক বলেন, চাল বিক্রি করে আড়তদার ও বেপারিদের টাকা পরিশোধ করি। তাই পাইকারি বাজারে দেড় থেকে দুই টাকা কমে চাল বিক্রি করছি। তবে চালকলের মালিকরা এখনও দাম কমায়নি। সরকার যেসব চালকলে বা গুদামে অভিযান চালিয়েছে তারাই কমিয়েছে। বাকিরা এখনও আগের দামই বিক্রি করছে।

খুচরাবাজারে এখনও চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু পাইকারি বাজারে দাম কমছে, খুচরাবাজারেও কমবে। একটু সময় লাগবে। তবে দাম কমবেই। কারণ সরকার প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বিক্রির সুযোগ দিয়েছে। এতে বস্তাপ্রতি ৫০-৬০ টাকা কমবে।

এ বিষয়ে মুগদার খুচরা ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, চালের দাম কমছে শুনছি। কিন্তু আসলে কমেনি। মোটা চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমলেও চিকন চাল আগের দামেই আছে।

খুচরাবাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৬ টাকায়, নাজিরশাইল ৬৬-৭০, আটাশ ৫৫-৫৬, ঊনত্রিশ ৫৫, স্বর্ণা ৫২-৫৪, মোটা (হাইব্রিড) চাল ৪৫-৪৬ টাকায়।

রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দর

চালের প্রকার পাইকারি খুচরা
মিনিকেট ৫৭-৫৯ ৬৫-৬৬
নাজিরশাইল ৬৪-৬৬ ৬৬-৭০
আটাশ ৫২-৫৩ ৫৫-৫৬
ঊনত্রিশ ৫০-৫২ ৫৫-৫৬
স্বর্ণা ৪৫-৪৬ ৫২-৫৪
মোটাচাল (হাইব্রিড) ৪২-৪৩ ৪৫-৪৬

উল্লেখ্য, আমদানি শুল্ক কমিয়েও চালের বাজারে স্বস্তি আনতে পারছিল না সরকার। এ অবস্থায় মজুতবিরোধী অভিযান শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিন মন্ত্রী। সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে চালের দাম কমে আসবে বলে ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা।