‘পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীও এভাবে মানুষ হত্যা করেনি’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সময়টা এতই খারাপ যে, আজকাল মানুষ নিজ বাসার ড্রইং রুমে বসেও কথা বলতে খুব একটা সাহস পাচ্ছে না। পাশে কেউ আপনাদের ডিজিটাল টেলিফোন দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে- এ ভয়ে আজকাল আমরা পারস্পরিকভাবে যখন কথা বলি, রাজনৈতিক কর্মী যারা রয়েছি, তারা খুব সাবধানে কথা বলি। যাতে সে কথার কারণে কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়।’

তিনি বলেন, ‘এত খারাপ সময় বোধ হয় আমরা কখনও দেখিনি। পাকিস্তান সময়ে যুদ্ধের নয় মাস ছিল ভয়বাহ। তার আগে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীও এভাবে উলঙ্গভাবে মানুষ হত্যা করেনি, মানুষের ওপর নির্যাতন করেনি, নির্মমতা চালায়নি। আজ সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগের অনির্বাচিত সরকার। তাদের প্রতি জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নেই। অথচ এ আওয়ামী লীগের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে, ইতিহাস রয়েছে।তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম করেছে। অত্যন্ত দুঃখ হয় যে, আওয়ামী লীগ আজ পুরোপুরিভাবে গণতন্ত্রের বিপক্ষে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে শুধুমাত্র তাদের একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে, এক ব্যক্তির শাসনকে পাকাপোক্ত করতে।’

শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে অনুষ্ঠিত ‘রণধ্বনি’ গানের সিডি উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ গণতন্ত্রের মোড়ক নিয়ে একেবারে ভয়াবহভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। এটা নজিরবিহীন। আমি বুঝতে পারি না, এখনও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা আসে কীভাবে? সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট বেল দিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত স্টে করে রেখে কৌশলের অবলম্বন নিয়ে ছুটির পর দেয়া হবে, ছুটির পর করে করে মাসের পর মাস বেগম জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে, দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আমি জানি না এ কথা বললে, আদালত অবমাননা হবে কিনা? হলেও কিছু যায় আসে না। কারণ আমাদের এখন আর হারানোর কিছু নেই।’

তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার। সময় এসেছে একেবারে রুখে দাঁড়াবার, প্রতিবাদ করার, প্রতিরোধ করার। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে ভয়াবহ এ পরিণতি থেকে এ দেশকে রক্ষা করা, এ জাতিকে রক্ষা করা। আমরা বহুবার সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি যে, আলোচনা করুন, কথা বলুন, এর পরিসমাপ্তি ঘটান। তারা কর্ণপাতই করেননি।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) সব সময় বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সব কিছু হবে। আরে সংবিধান তো আপনারা কেটে-কুটে সব শেষ করে দিয়েছেন। আপনাদের সুবিধা মতো সংবিধান সাজিয়ে নিয়েছেন, কীভাবে আবার ক্ষমতায় আসতে পারেন! বাস্তবতা হলো, আজ গ্রামে যান, বাজারে যান, সাধারণ মানুষের কাছে যান, গিয়ে দেখুন তারা কী ভাবছে? কী চিন্তা করছে? কী অবস্থা… এটা বোঝার মতো অবস্থা বোধ হয় এখন আর তাদের নেই। তারা এমন এক জায়গায় চলে গেছে, যেখান থেকে জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা সেগুলো বোঝার ক্ষমতা এখন তাদের নেই।’

তিনি বলেন, ‘বক্তব্য দেয়ার সময় শেষ হয়ে আসছে, বন্ধুরা বক্তৃতা-টক্তৃতা দেয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। আমাদের কাজে নামতে হবে, দেশ রক্ষার কাজে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন ব্যক্তি খালেদা জিয়া নন, শুধু বিএনপি চেয়ারপারসন নন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আজ তাকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে, গায়ের জোরে কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া, এর অর্থ হচ্ছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা। এর অর্থ হচ্ছে দেশের জনগণের যে সমস্ত অধিকার, সেই অধিকার খর্ব করে একজন ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম। দুর্ভাগ্য বলছি এ জন্য যে, সেই সময় যে চেতনা, যে স্বপ্ন, যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, হাজার হাজার মানুষ, লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, নয় মাস বনে-বাদাড়ে থেকে দেশ ছেড়ে যুদ্ধ করেছে তাদের সমস্ত স্বপ্ন আজ ধূলিস্যাৎ করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই চেতনাকে পুরোপুরি নিহত করা হয়েছে। সেই গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই এবং কথা বলার অধিকার নেই। আমাদের সেই অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু ভোটের অধিকার নয়, এখন তো আমার নাগরিক অধিকার পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, সারাদেশে প্রায় ৮০ হাজারের মতো মামলা হয়েছে। ১৬ লাখ আসামি তৈরি করা হয়েছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আসুন পবিত্র এ রমজান মাসে আমরা আল্লাহর কাছে এই দোয়া চাই যে, আল্লাহ যেন আমাদের সেই শক্তি দেন, যেই শক্তি দিয়ে আমরা ভয়াবহ স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে, ভয়াবহ যে দানব বাংলাদের বুকে চেপে বসেছে তাকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে জেগে উঠতে পারি এবং গণতন্ত্রের মাতা ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারি।

সিডির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।