পার্থকে ফের জোটে ফেরানোর চেষ্টায় বিএনপি

ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থর দল বিজেপিকে ফের জোটে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। জোটের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসনে ইতিমধ্যে স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ডও পার্থর সঙ্গে কথা বলেছে।

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডাকা হতে পারে। পার্থকেও ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চলমান রাজনীতির দুঃসময় চলছে। এ সময় জোটভুক্ত অনেকের মধ্যে মান-অভিমান থাকতে পারে। বিশেষ করে বড় দল বিএনপি এবং জোটের আরও যারা নেতা আছেন তারা সবাই নিজ অবস্থান থেকে পদক্ষেপ নেবেন।

এতে মান-অভিমান আর থাকবে না। বিজেপির ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পেছনে কাজ করেছে মান-অভিমান। অচিরেই এসব সেরে যাবে।

জোটের ঐক্য সুদৃঢ় আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা ২০ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে যে কর্মসূচি পালন করছি তা অব্যাহত থাকবে। সরকারের নানা ধরনের খেলাধুলা থাকতে পারে। কিন্তু যারা ১০ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিল করেছেন তাদের মধ্যে ভাঙন আসবে না। যত নিষ্ঠুর নির্বাচন হবে ততই ঐক্য আরও অটুট হবে, আরও মজবুত হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড়। আমাকে জোটের সমন্বয়ক ফোন করেছিলেন। তাকেও আমি একই কথা বলেছি।

২০ দলীয় জোটের আগামী বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলে যোগ দেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জোটের বৈঠকে যদি আমন্ত্রণ জানানো হয় বিজেপি দল হিসেবে যোগ দেবে। আমরা তো একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। শুধু জোট নয়, কথা বলার জন্য আমার দলকে যে কেউ আমন্ত্রন জানালে অবশ্যই দলের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি যাব।

সোমবার রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থর দল বিজেপি। দলটি জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর থেকে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমশই স্থবির হয়ে পড়ে। বিএনপির রাজনীতি ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে পড়েছে। ২০ দলের গুরুত্ব তাদের কাছে নেই। এছাড়াও শপথের মাধ্যমে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন দলটির নেতারা।

সূত্র জানায়, এতদিন শরিক দলগুলোর অভিযোগ ও ক্ষোভ আমলে না নিলেও পার্থ জোট ত্যাগের পর বিরোধ কমাতে আলোচনা শুরু করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের সিনিয়র এক নেতা।

জোটের অভ্যন্তীরণ বিরোধ কমাতে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মান-অভিমান নিরসনে ওই নেতা ইতিমধ্যে জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথাও বলেছেন।

বিজেপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে আন্দালিভ রহমান পার্থর সঙ্গে কথা বলেছেন জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। যদিও জোট ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনড় থাকার কথা তাকে জানিয়েছেন পার্থ। পরে বিএনপির হাইকমান্ডও তার সঙ্গে কথা বলেছে। জানা গেছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জোটের বৈঠক ডাকা হবে। পার্থকেও ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা রয়েছে।

বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক বলেন, আন্দালিভ রহমান পার্থের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি দেয়নি। তাই বিজেপি জোট ছেড়ে গেছে এটা আমরা বলতে চাই না। আমাদের ধারণা পার্থ হয়তো অভিমান করেছেন। আশা করছি তার অভিমান থাকবে না।

১৯৯৯ সালে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাপা), জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে গঠিত হয় চারদলীয় জোট। ২০০০ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাপা জোট ছাড়লেও নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে দলটির একাংশ বিজেপি নামে জোটে থেকে যায়।

নাজিউর রহমান মঞ্জুর মৃত্যুর পর ২০০৪ সালে দলের দায়িত্ব নেন তার ছেলে ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। বিএনপির শরিক হিসেবে পথচলা অব্যাহত রেখে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি। ১৯ বছর পর সোমবার জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় বিজেপি।