পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার আহ্বান খালেদার

জীবন ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পুরুষ-নারী-শিশুদের বাংলাদেশে আশ্রয় এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার জন্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অমনোযোগী বাংলাদেশ সরকারের দুর্বল কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই পরিস্থিতি শোচনীয় রুপ ধারণ করেছে। আমি বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।

গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় রোহিঙ্গাদের নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করেন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় সেদেশের রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিবর্ষণে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং এটির নিন্দা জানাচ্ছি। রোহিঙ্গারা বসতভাটি, সহায় সম্বল হারিয়ে প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সীমান্তগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যে গ্রামের পর গ্রামে আগুন জ্বলছে। প্রাণভয়ে রোহিঙ্গারা দিগ্বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে, গহীণ অরণ্যে ঢুকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছে। আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের ওপরও মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীবাহিনী অবিরাম গুলিবর্ষণ করে যে নারকীয় পরিবেশ তৈরি করেছে তা বর্ণনাতীত।

তিনি আরও বলোন, গুলিবিদ্ধ, গুরুতর আহত রোহিঙ্গা যারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে সক্ষম হয়েছে তাদের অনেকেই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে এবং কারো কারো মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার এলাকায় রোহিঙ্গা পুরুষ-নারী-শিশুরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নাফ নদীর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তীরে বসে ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তায় প্রহর গুনছে। এই দৃশ্য অমানবিক, বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা সমাধানহীন একটি অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত থাকলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্রমাগতভাবে অবনতিশীল হতে থাকবে এবং এতে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে ঐতিহ্যগত স্থিতিশীলতায় বিরুপ প্রভাব ফেলবে। সুসম্পর্কের আবহমানধারা যাতে কোনভাবেই বিনষ্ট না হয়, সে বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হয়ে রোহিঙ্গা সংকটের জরুরি অবসান ঘটাতে হবে। শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে যেকোনো সংকট আরো ঘণীভূত হয়।

এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর জলসীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় আজও ৪৫ রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

টেকনাফ ২নং বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রোববার দিবাগত মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত পৃথক অভিযানে ১৪৫ রোহিঙ্গাকে জলসীমানা অতিক্রম করার সময় প্রতিহত করে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটকের পর মানবিক সহায়তা দিয়ে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।