পিয়ন পদে আবেদন পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের, সবাই ফেল

পিয়ন পদের জন্য আবেদন করেছিলেন কয়েকজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। নিয়মানুযায়ী, তাদের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু পাস করতে পারেননি কেউ।

তবে মাত্র ১৫ হাজার টাকা বেতনের চতুর্থ শ্রেণির এ চাকরির জন্য আবেদন করে লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন মাস্টার্স পাস করা কয়েকজন। তারা অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে এখন মৌখিক পরীক্ষা দিচ্ছেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পিয়ন নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে আবেদনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয় অষ্টম শ্রেণি পাস।

৭০টি পদে নিয়োগের জন্য ১১ হাজার প্রার্থী আবেদন করেন। কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের আবেদনপত্র দেখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আবেদনপত্রগুলো খুঁটিয়ে দেখে আমাদের চক্ষুস্থির হয়ে যায়। অষ্টম শ্রেণি পাস করলেই যে চাকরি পাওয়া যায় তার জন্য পিএইচডি ডিগ্রিধারী একাধিক ব্যক্তি আবেদন করেছেন।

তিনি জানান, তবে তাদের কেউ-ই লিখিত পরীক্ষায় পান করতে পারেননি। ৫০০ জন মৌখিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে এমএসসি ও এমটেক পাস করা ব্যক্তিরাও আছেন।

জানা গেছে, মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার পর এ মাসের শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। তখনই জানা যাবে পিয়ন পদে কাদের নিয়োগ দেয়া হবে।

এদিকে পিয়ন পদে উচ্চশিক্ষিতদের আবেদনের ঘটনা জানাজানি হলে ভারতের কেন্দ্রীয় এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নীতিকে এর জন্য দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক ও গবেষক সংগঠনের নেতারা।

ডেমোক্রেটিক রিসার্চ স্কলার অর্গানাইজেশন-ডিআরএসওর নেতা অর্ঘ্য দাস বলেন, এ তথ্য ভয়াবহ। কর্মসংস্থানের পরিবেশই তো নেই, নিয়োগ হবে কী করে! এ দেশের প্রধানমন্ত্রী পাকোড়াশিল্পের কথা বলছেন। আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী চাপ শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছেন। বাস্তবে এগুলো নিষ্ঠুর তামাশা ছাড়া কিছুই নয়।

তিনি বলেন, একদিকে মৌলিক গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ কমানো হচ্ছে, বৃত্তি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নেই। বাঁচার তাগিদে উচ্চশিক্ষিতরা যা পাচ্ছেন, তাই করছেন।’

যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন আবুটার নেতা তরুণ নস্কর বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে, সরকারগুলো যা প্রতিশ্রুতি দেয়, সবই ভাঁওতা।

পশ্চিমবঙ্গ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সমিতি-ওয়েবকুটার নেতা শ্রুতিনাথ প্রহরাজের দাবি, তৃণমূলের আমলে রাজ্যে নিয়োগসংক্রান্ত সমস্যা আগের চেয়ে আরও প্রকট হয়েছে।

তিনি বলেন, বামপন্থীদের সময়ে শিল্পায়নের জন্য সরকার উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু এই সরকারের আমলে কোনো নতুন শিল্প আসেনি। পুরনো শ্রমনিবিড় কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশন, কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাও অনিয়মিত। প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট) নিয়ে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসবের ফলেই এ অবস্থা। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।