পুরুষ বানানোর প্রক্রিয়ায় গাঁজা তুলে দেয়া হচ্ছে ছেলেদের : জাবি উপাচার্য

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন, জাবি প্রতিনিধি : যে ছেলে জীবনে কোনো দিন সিগারেটে টান দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে পুরুষ বানানোর প্রক্রিয়ায় তার হাতে গাঁজার স্টিক তুলে দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম।

বিশ^বিদ্যালয়ের ২০১৭-২০১৮ সেশনের নবীন শিক্ষার্থীদের প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। উপাচার্য ড.ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মান্নান বলেন,‘ যে জ্ঞান আজও মানুষের অজ্ঞাত, যে জগৎ এখনও অজানা, যে সম্পদ অর্জন সম্ভব হয়নি, সেসব অর্জনের মাধ্যমে এক অদৃষ্টপূর্ব ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে।’ তিনি বিদ্যমান সকল অন্ধকারের বন্ধ দুয়ার খুলে আপন প্রতিভা ও মেধার জাদুকরি শক্তিতে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল সমস্যা নিরসনে শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহবান জানান
উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। ১৬৩ জন শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক পেয়েছে, যার মধ্যে ১০১ জনই মেয়ে। মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে এতে আমরা খুশি। তাদের অভিনন্দন জানাই। কিন্তু, আমাদের ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে কেন? তারাও তো মেধাবী, ভালো রেজাল্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমিও বলতে চাই, এতে আমাদের খুব দুঃখ লাগে। কিন্তু, এর কারণ তো আমরা সমাজবিজ্ঞানীরা জানি।’

এরপরই উপাচার্য বলেন, ‘আমরা তথ্য নিয়ে বসে আছি কেন ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর গণরুমে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বেশি সময় থাকতে হয়, বড় গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। ওখানে পড়ালেখা করা যায় না। যে ছেলে জীবনে কোনো দিন সিগারেটে টান দেয়নি পুরুষ বানানোর প্রক্রিয়ায় তার হাতে গাঁজার স্টিক তুলেদেয়া হচ্ছে। এর সবই আমাদের জানা। কিন্তু, আমরা কিছু করতে পারছি না।’

আমরা শিক্ষার্থীদের সুন্দরভাবে পড়ালেখার সুযোগ করে দিতে চাই, এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চাই। এজন্য হল নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো প্রয়োজন। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করে রেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের ১২শ’ কোটি টাকা দেয়ার কথা। কিন্তু, নানা প্রক্রিয়ার কারণে সেটি আছে ঝুলে আছে।

তিনি ইউজিসির চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে বলেন,‘ আপনার মাধ্যমে আমি সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আহ্বান জানাই, আমাদের এই অর্থ দ্রুত ছাড়ের ব্যবস্থা করুন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা আমাকে একটি ভয়ংকর তথ্য জানিয়েছেন। রাতের বেলা মাদক নিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে অনেক এমন শিক্ষার্থী আসে যারা ওখানে ভাংচুর করতে চায়, ডাক্তারদের মারতে চায়। একারণে আমাদের পার্টটাইম ডাক্তাররা রাতের বেলা এখন আর ডিউটি করতে চান না। নারী ডাক্তারদের তো দেয়া সম্ভবই না।

ভিসি বলেন, ‘আমরা এখন চিন্তা করছি ড্রাগ টেস্ট করিয়ে তারপর শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা যায় কিনা। এবার কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটিতে এ প্রস্তাব রেখেছি আমরা। আমরা আরও ভাবছি। একটা ছেলে মেধাবি, ভাল রেজাল্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল তারপর ড্রাগ টেস্টে বাদ পড়ে গেল। নাকি আমরা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিব! কোনটা বেশি মানবিক হবে? এ কারণে এ বিষয়ে আমরা তড়িঘড়ি করছি না, আরও ভাবছি। তোমরাও ভাব, কোনটা ভাল হয়!’

মাদকের সাথে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ভিসি নবীন শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চার স্বাধীন উন্মুক্ত পরিবেশ। এর মানে এই না যে তোমরা রাত ৩টা পর্যন্ত সুপারিতলায় বসে আড্ডা দিবা। সুপারিতলায় কোনো জ্ঞান চর্চা হয় না। ওখানে কোনো পড়ালেখা হয় না। পড়ালেখা হলে হলের মধ্যেই হয়। ওখানে যা হয় তা তোমাদের ফ্যামিলি বাবা-মা কখনই মেনে নিবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তোমাদের বাবা-মায়ের মতই। আমরাও মেনে নিতে পারি না। শৃঙ্খলা সবসময় শৃঙ্খল নয়।’