পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতেই লুকিয়ে ছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম

নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার হওয়া সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

রোববার গ্রেফতারের পর সোমবার তাকে আদালতে নেয়া হলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নিদের্শ দেন সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।

এদিকে রোববার গ্রেফতারের আগের দিন পর্যন্ত ওসি মোয়াজ্জেম কুমিল্লা জেলার এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় পলাতক ছিলেন বলে জানা গেছে। সেখান থেকে রোববার ঢাকার উচ্চ আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর কাছে গিয়েছিলেন। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বেলা তিনটার দিকে শাহবাগ থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তারা জানান, ওসি মোয়াজ্জেমকে খুঁজছিলেন ডিএমপি ডিবির একটি দল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতারের নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকেই ডিবির দলটি রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালায়। পাশাপাশি ওসির বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাসায় নজরদারি জোরদার করেন তারা। একই সঙ্গে ওসি মোয়াজ্জেমের দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগকারী ব্যক্তিদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে।

ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম যশোরের নিজ বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে রাজধানীর কল্যাণপুরে তার খালার বাসায় ওঠেন। গত ১০ জুন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে গোয়েন্দারা সেই বাড়ির সন্ধান পাওয়ার পর ওসি মোয়াজ্জেম টের পেয়ে সেখান থেকেও সটকে পড়েন। সরাসরি চলে যান কুমিল্লা জেলার এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে। পুলিশের ওই কর্মকর্তার নাম আসাদুজ্জামান। তিনি চান্দিনা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হিসেবে রয়েছেন।

আসাদুজ্জামান মোয়াজ্জেমের খালাতো ভাই। সেখানে অবস্থান করেই তিনি আগাম জামিনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ডিবির অনুসরণের বিষয়টি টের পেয়ে তিনি সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল বন্ধ করে রাখেন। এমনকি স্ত্রী ও স্বজনদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তবে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে আইনজীবী ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। এরই একপর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেওয়ার জন্য গতকাল সকাল ১০টার দিকে হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা নামে একজন আইনজীবীর চেম্বারে যান। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় মোয়াজ্জেমকে।

ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, কুমিল্লার সদর এলাকায় মোয়াজ্জেমের নিজেরও একটি বাড়ি আছে। সেখানে অবস্থান না করে তিনি তার খালাতো ভাই পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় আত্মগোপন করেছিলেন। পুলিশ সেখানেও খোঁজখবর নেওয়া শুরু করলে টের পেয়ে মোয়াজ্জেম গত শুক্রবার রাতে সেখান থেকেও চলে যান। এরপর কুমিল্লার সদর এলাকায়ই অন্য কারও বাসায় অবস্থান করেন। তারপর গতকাল ভোরে সেখান থেকে ঢাকায় এসেছিলেন।