পোপের সঙ্গে কী কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর?

পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোমবারের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও আন্ত-ধর্মীয় বিশ্বাস জোরালো করা, ভ্যাটিকান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ক্যাথলিক চার্চের বিভিন্ন ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন পোপ। ভ্যাটিকানের মুখপাত্র ক্রাক্স নাউ-এর এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সরকারি সফরে রবিবার সন্ধ্যায় ইতালিতে পৌঁছান। তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘পোপের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী সোমবার সকালে ভ্যাটিকান সিটি সফর করেন এবং ইতালির রাজধানী রোমের কাছে ভ্যাটিকান সিটিতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।’ প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টায় ভ্যাটিকান সিটিতে পৌঁছার পর সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ভ্যাটিকান সিটিতে পোপের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন।

ভ্যাটিকান সূত্রের বরাত দিয়ে ক্রাস্ক নাউ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকটি ২০ মিনিট স্থায়ী হয়। বৈঠকে ভ্যাটিকান ও বাংলাদেশের মধ্যে ইতিবাচক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে আলোচনা হয়। গত বছর নভেম্বরের ৩০ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ২ তারিখ পর্যন্ত পোপের বাংলাদেশ সফরের কথাও উঠে আসে আলোচনায়। ভ্যাটিকানের অনুবাদকের সহায়তা নিয়ে দুজনই ইংরেজিতে কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা পোপকে বলেছেন, তার বাংলাদেশ সফরে তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছেন। উত্তরে পোপ তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ক্রাস্ক নাউ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। অচিরেই রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরসনে একটি স্থায়ী সমাধান আসবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সোমবারের বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে এইসব মন্তব্য করেন। ভ্যাটিকানের মুখপাত্র ক্রাক্স নাউ জানিয়েছে, ২০ মিনিটের ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটিই প্রাধান্য পেয়েছে।

দুই মাস আগে পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশ সফর করেছেন। মিয়ানমারে তিনি রোহিঙ্গাদের জাতিগত স্বীকৃতির প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের নিপীড়নের কথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি তিনি। তবে বাংলাদেশে গিয়ে পোপ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সে সময় তিনি তাদের জাতিগত পরিচয়কে সামনে এনেছিলেন। ক্রাস্ক নাউ-এর সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। বাংলাদেশ সফরের সময় ঢাকায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১৮ প্রতিনিধির সঙ্গে পোপের বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, পোপ-হাসিনা বৈঠকে দু’জনই আশা প্রকাশ করেছেন, অচিরেই ‘সংকটের যথাযথ ও স্থায়ী একটি সমাধান আসবে’।

রোহিঙ্গা ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুর সুরক্ষার প্রশ্নও বৈঠকের আলোচনায় স্থান পেয়েছে। ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে শিক্ষা বিস্তারে ক্যাথলিক চার্চের ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যে আন্ত-সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে প্রচেষ্টা জারি আছে ভ্যাটিকানের।