প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে জড়িতরাও পার পেয়ে যাবেন?

আইনি জটিলতা ও তথ্য না পাওয়ায় পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা বাংলাদেশিদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই পরিস্থিতিতে আবার প্যারাডাইজ পেপারস কেলেঙ্কারিতে বিদেশে বেআইনিভাবে টাকা পাঠানোয় নাম এসেছে ১০ বাংলাদেশির নাম। তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই জটিলতার আশঙ্কা করছেন সংস্থার কর্মীরা।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে কয়েকজন বাংলাদেশির নাম আসার পর ২০১৬ সালের এপ্রিলে অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। কিন্তু অনুসন্ধান এখনও শেষ করতে পারেনি তারা।

এই পরিস্থিতিতে প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা বাংলাদেশিদের বিষয়ে অনুসন্ধানের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সংস্থাটি। তবে সহসাই সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মীরা। তবে এই অনুসন্ধান কতটা এগিয়ে নেয়া যাবে, এ নিয় সংশয়ে তারা।

২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল বিদেশে অবৈধভাবে বিনিয়োগকারীদের একটি তালিকা প্রকাশ হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান, প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের নাম প্রকাশকারী এই ঘটনাটি পরিচিতি পায় পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি হিসেবে। সারাবিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দেয়া তালিকাটি প্রথমে জার্মান দৈনিক সুইডয়চে সাইটংয়ের হাতে আসে। পরে সেসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) হাতে তুলে দেয় তারা।

এই তালিকায় নাম ছিল ১১ বাংলাদেশির। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল দুদকের উপপরিচালক আখতার হামিদ ভুঁইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। ওই বছরের ২ মে পানামা পেপারসে নাম আসা ১১ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। এদের মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করে সংস্থাটি। কিন্তু দুদকের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা বা অন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক আখতার হামিদ ভুঁইয়া বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম এখনো চলছে। এখনো চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি।’

দুদক সূত্র জানায়, পানামা পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে সুর্নির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) পাঠায় দুদক। তবে এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুর্নির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এরপর পর থেকেই অনুসন্ধান অনেকটি ঝিমিয়ে পরে।

আবার ২০১৬ সালে সংশোধিত দুদক আইনে অর্থ পাচার বা মানি লন্ডারিং বাদ দিয়ে শুধু ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ তদন্তের এখতিয়ার দেওয়া হয়। আর ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে অভিযোগ তদন্তের জন্য ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ গঠন করার কথা বলা হয়। এ কারণে আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ হওয়া এসব গোপন নথির বিষয়ে অনুসন্ধান নিয়ে ঝামেলায় পড়েছে দুদক।

দুদদের গণসংযোগ কর্মকর্তা উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘দুদক শুধুমাত্র ঘুষ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হলে সেটুকুর অনুসন্ধান করতে পারে। দুদক সবধরনের মানি লন্ডারিং এর অনুসন্ধান করতে পারে না।’

যদিও দুদকের এ কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘এ সংক্রান্ত দুই মামলার রায় হয়েছে। রায়ের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহ হয়ে গেছে। এখন থেকে সব ধরনের মানি লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান করতে পারে দুদক।’

এদিকে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিশ্বের প্রায় ১৮০ টি দেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, রাজনীতিকের নাম প্রকাশ হয়েছে একই ধরনের বিনিয়োগের বিষয়ে। এই তালিকাটি প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এরা সবাই নিজ দেশে কর ফাঁকি দেয়ার জন্য, কর দিতে হয় না বা দিলেও খুবই স্বল্প হারে দিতে হয় এমন দেশে (ট্যাক্স হ্যাভেন) অর্থ বিনিয়োগ করে রেখেছেন।

এই তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিণ্টু, তার স্ত্রী ফাতিমা আউয়াল এবং তিনপুত্র তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল ও তাজওয়ার মোহাম্মদ আউয়ালেরও নাম আছে।

এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকা মিন্টু ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগ দেন। দুই বছর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাকে মেয়র পদে সমর্থন দিয়েছিল বিএনপি। পরে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হলে মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে সমর্থন দেয় বিএনপি। তিনি বাংলাদেশ ফুডবল ফেডারেশনের সঙ্গেও জাড়িত। এ ব্যাপারে আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে দুইবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এরা ছাড়াও পেরাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আছে ফয়সাল চৌধুরী, ফরিদা মুঘল, শহীদ উল্লাহ এবং সামির আহমেদের।

মিন্টুর মতো অন্য যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যেও কেউ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি।